যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহু
২১ মাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি নেতানিয়াহুর সাথে সংঘাত অবসানের বিষয়ে ‘অত্যন্ত দৃঢ়’ অবস্থান নিয়েছেন এবং এই সপ্তাহেই ‘একটি চুক্তি হবে’ বলে তিনি মনে করেন।
বিমানে ওঠার আগে ইসরায়েলের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘আমরা আলোচিত চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি, আমাদের সম্মত শর্তানুযায়ী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আলোচনা নি:সন্দেহে এই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’
স্থানীয় সময় রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে, যেখানে মার্কিন-প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে, চুক্তি বারবার আটকে যাওয়ার মূল কারণগুলো এবারও সমাধান হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, টানা ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ভয়াবহ মানবিক সংকটে জর্জরিত গাজাবাসী। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে গাজার শহরে পালিয়ে আসা নাবিল আবু দায়াহ বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতি চাই না, চাই সম্পূর্ণ যুদ্ধবন্ধ। সত্যি বলতে, আমি ভয় পাচ্ছি যে ৬০ দিন পর আবার যুদ্ধ শুরু হবে। আমরা বাস্তুচ্যুত হয়ে, তৃষ্ণা ও ক্ষুধায়, তাবুতে বাস করে ক্লান্ত। জীবনযাপনের মৌলিক চাহিদা আমাদের শূন্যের কোঠায়।’
এর আগে, শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায়, গাজায় আটক প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দি (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা) মুক্তির দাবিতে বড় সমাবেশ হয়েছে। কিছু বন্দিদের পরিবার প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই চুক্তিতে সব বন্দিকে একসাথে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।
ইলায় ডেভিড, যার ছোট ভাই (একজন সঙ্গীতশিল্পী) গত যুদ্ধবিরতির সময় হামাসের কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল, বলেন, ‘এখনই জীবন বাঁচানোর সময়। মধ্যপ্রাচ্যের দ্রুত বদলে যাওয়া বাস্তবতায়, এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি ব্যাপক চুক্তি স্বাক্ষরের, যা সব বন্দিকে—একজনকেও বাদ না দিয়ে—মুক্ত করবে।’
এটি নেতানিয়াহুর তৃতীয় সফর। তবে, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি হামলায় অংশ নেয়া এবং পরবর্তীতে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি চুক্তি করানোর পর এই প্রথম দুই নেতা মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের সাথে ১২ দিনের সাম্প্রতিক সংঘাত গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তা হারানোর পর ইরান-হামলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়ে নেতানিয়াহু শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ফলে, তার জোটসঙ্গীদের (যারা গাজায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়) তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও তিনি শান্তিচুক্তিতে রাজি হতে পারেন।
অন্যদিকে, হামাসের প্রধান আঞ্চলিক মিত্র ইরানের ওপর হামলায় এই গ্রুপটি আরও দুর্বল হয়েছে, তাই চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ছাড় দিতেও তারা এখন বেশি প্রস্তুত হতে পারে।
এদিকে, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য অগ্রাধিকারে এগোতে চাইছেন, যেমন—ইসরায়েল-সিরিয়া সীমান্ত আলোচনা, ইসরায়েল-সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, এবং ইরানের সাথে অসমাপ্ত পরমাণু চুক্তি নিয়ে সম্ভাব্য নতুন আলোচনা।