ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
Logo আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যে চাপ বেড়েছে Logo রাশিয়ার হামলার পর মিত্রদের প্রতি জেলেনস্কির বাস্তবায়নের আহ্বান Logo ববি হাজ্জাজের ওপর হামলায় জামায়াতের নিন্দা Logo নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ড্র Logo সোহাগ পরিবহন কাউন্টারে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বেলালসহ দুইজন গ্রেফতার Logo পার্বত্য অঞ্চলেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপিত হলো ঈদে মিলাদুন্নবী Logo কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান: দাবি ডা. জাহিদের Logo জেলায় জেলায় উঠান বৈঠকে ব্যস্ত এনসিপি, রাজপথে ফেরার প্রস্তুতি Logo পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনারের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক Logo ট্রাম্পের প্রশংসায় মোদির প্রতিক্রিয়া: নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত?

গাজা সম্পূর্ণ দখলে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে থামাতে রাজি নন ট্রাম্প

নিজস্ব সংবাদ :

 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গাজা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে তার প্রধান মনোযোগ গাজাবাসীদের জন্য খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করার দিকে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “এই বিষয়ে (গাজা দখল) আমি মন্তব্য করতে চাই না। এটি পুরোপুরি ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত।”

মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দীর্ঘদিনের, এবং বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর এই সহায়তার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের গাজার সীমিত এলাকায় ঠেলে দিয়ে তাদের বৃহৎ অংশকে বাস্তুচ্যুত করেছে, ফলে বর্তমানে ৮৬ শতাংশ এলাকা সামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যদি বাকি অংশেও অভিযান চালানো হয়, তাহলে বেসামরিক মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তে আরও শঙ্কা তৈরি হয়েছে গাজায় হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে।

জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনকা এদিন নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “গাজার সম্পূর্ণ দখল ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আইনে গাজা একটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবেই স্বীকৃত এবং তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করলেও এখনো অঞ্চলটির আকাশসীমা, সমুদ্রপথ এবং প্রবেশদ্বারগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা একে প্রকৃত অর্থে দখল বলেই বিবেচনা করে থাকেন।

২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ডানপন্থী ইসরায়েলি নেতারা গাজায় নতুন করে সামরিক উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেয়া—যা অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের মতে একটি জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা।

ট্রাম্পও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজার জনগণকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ।

গাজায় যখন ইসরায়েলি অভিযান তীব্র হচ্ছে, তখন সেখানে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্চ থেকে ইসরায়েল প্রায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে মার্কিন-সমর্থিত গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফোরাম (GHF) পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোই ফিলিস্তিনিদের প্রধান সহায়তার উৎস।

তবে GHF-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু খাদ্য ট্রাক প্রবেশ এবং আকাশপথে সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে, তা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অতি সীমিত।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার প্রশাসন গাজায় মোট ৬০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন গেছে GHF-এর তহবিলে।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় ৬১,০০০-এর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং বহু এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করছে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
৪৭ বার পড়া হয়েছে

গাজা সম্পূর্ণ দখলে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে থামাতে রাজি নন ট্রাম্প

আপডেট সময় ০১:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গাজা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে তার প্রধান মনোযোগ গাজাবাসীদের জন্য খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করার দিকে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “এই বিষয়ে (গাজা দখল) আমি মন্তব্য করতে চাই না। এটি পুরোপুরি ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত।”

মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দীর্ঘদিনের, এবং বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর এই সহায়তার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের গাজার সীমিত এলাকায় ঠেলে দিয়ে তাদের বৃহৎ অংশকে বাস্তুচ্যুত করেছে, ফলে বর্তমানে ৮৬ শতাংশ এলাকা সামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যদি বাকি অংশেও অভিযান চালানো হয়, তাহলে বেসামরিক মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তে আরও শঙ্কা তৈরি হয়েছে গাজায় হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে।

জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনকা এদিন নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “গাজার সম্পূর্ণ দখল ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আইনে গাজা একটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবেই স্বীকৃত এবং তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করলেও এখনো অঞ্চলটির আকাশসীমা, সমুদ্রপথ এবং প্রবেশদ্বারগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা একে প্রকৃত অর্থে দখল বলেই বিবেচনা করে থাকেন।

২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ডানপন্থী ইসরায়েলি নেতারা গাজায় নতুন করে সামরিক উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেয়া—যা অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের মতে একটি জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা।

ট্রাম্পও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজার জনগণকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ।

গাজায় যখন ইসরায়েলি অভিযান তীব্র হচ্ছে, তখন সেখানে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্চ থেকে ইসরায়েল প্রায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে মার্কিন-সমর্থিত গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফোরাম (GHF) পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোই ফিলিস্তিনিদের প্রধান সহায়তার উৎস।

তবে GHF-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু খাদ্য ট্রাক প্রবেশ এবং আকাশপথে সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে, তা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অতি সীমিত।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার প্রশাসন গাজায় মোট ৬০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন গেছে GHF-এর তহবিলে।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় ৬১,০০০-এর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং বহু এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করছে।