জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে উমরের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার সাক্ষী ছিলেন সদ্যপ্রয়াত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর। জীবদ্দশায় তিনি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে লিখিত জবানবন্দি জমা দিয়ে গেছেন। সেই নথি যমুনা টেলিভিশনের হাতে এসেছে।
সাক্ষ্যে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর ও পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগের ভূমিকা, তার অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। উমরের মতে, এই অভ্যুত্থান কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশেই এক নজিরবিহীন ঘটনা। ভারত বা পাকিস্তানে এমন ব্যাপক ও শক্তিশালী জনআন্দোলনের নজির নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালের আন্দোলনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সবচেয়ে বিস্ফোরক ও রূপান্তরমূলক ছিল। ভাষা আন্দোলনে ভাষার স্বীকৃতি, ’৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন ও ’৯০-এ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলেও, এর কোনোটি এত ব্যাপক দলীয় পতন বা শাসকগোষ্ঠীর পলায়নের সাক্ষী হয়নি।
উমরের বক্তব্যে উঠে আসে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের ঘটনাও। তিনি উল্লেখ করেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, তার মন্ত্রিসভা, দলীয় কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও দেশত্যাগে বাধ্য হন। তার ভাষায়, এমন সংগঠিত দলীয় ভাঙন ও পালানোর নজির বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতেও বিরল।
জবানবন্দিতে তিনি আওয়ামী লীগের পতনকে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক অবসানের সাথে তুলনা করেন। তার মতে, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান দলটির জন্য এক চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাপ্তি তৈরি করেছে। ছাত্রসমাজের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগকেও তিনি এই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।
এছাড়া উমর অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার শাসন ভারতের প্রভাবাধীন ছিল এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি টানা ক্ষমতায় ছিলেন। তার দাবি অনুযায়ী, নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত সবকিছুই দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং এটি ভারতের রাজনৈতিক এজেন্টের মতো কাজ করছে।