ধর্মস্থলা মন্দিরে শতাধিক লাশ মাটিচাপার অভিযোগে ভারতজুড়ে তোলপাড়
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধর্মস্থলা এলাকায় এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ সামনে এসেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে শতাধিক মরদেহ—including শিশু ও ধর্ষণের শিকার নারীদের—গোপনে মাটিচাপা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল এক দলিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে।
৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ৩ জুলাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি জানান, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধর্মস্থলা মন্দিরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তাকে নিয়মিতভাবে মরদেহ গুমে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে আইনি নিরাপত্তার কারণে।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, নেথ্রাবতী নদীর পাশে তিনি প্রায়ই যৌন নির্যাতনের চিহ্নযুক্ত নগ্ন নারীদের মরদেহ দেখতে পেতেন। এমনকি শিশুদের মৃতদেহও ছিল তার অভিজ্ঞতায়, যেগুলোর শরীরে অ্যাসিড বা সহিংসতার ছাপ থাকত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে গেলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি পেতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তার ভাষায়, “আমাকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছিল—যদি লাশ না চাপাও, তবে তোমাকেই মাটিচাপা দেওয়া হবে।” অনেক সময় ডিজেল ঢেলে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দেওয়া হতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
২০১৪ সালে তার এক আত্মীয়াকে যৌন হয়রানির শিকার হতে দেখে তিনি সপরিবারে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যান এবং আত্মগোপনে থাকেন ১২ বছর। সম্প্রতি তিনি ফিরে এসে এক গণকবরে গিয়ে একটি কঙ্কাল উত্তোলন করে পুলিশের হাতে তুলে দেন এবং ছবিসহ আদালতে বিবরণও জমা দেন।
ধর্মস্থলা—a প্রাচীন মন্দির শহর যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত আসেন—এর অতীতেও নানা হত্যা ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ উঠে এসেছে।
-
১৯৮৭ সালে পদ্মলতা নামের কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল এলাকা।
-
২০১২ সালে সৌজন্য হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে “জাস্টিস ফর সৌজন্য” আন্দোলন হয়।
-
২০১৩ সালে নিখোঁজ হন মেডিকেল ছাত্রী অনন্যা ভাট, যাকে নিয়ে একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার মা।
বর্তমানে কর্ণাটক সরকার একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে মানবাধিকার আইনজীবীরা বৈঠক করেছেন।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী এস বালান বলেন, “১৯৭৯ সাল থেকে ধর্মস্থলায় রহস্যজনকভাবে মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে। এটি স্বাধীনতার পর ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ।”
মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হেগগড়ে পরিবার, যার বর্তমান ধর্মধিকারি বীরেন্দ্র হেগগড়ে একজন রাজ্যসভার সদস্য, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। মন্দিরের মুখপাত্র পরশ্বনাথ জৈন জানিয়েছেন, তারা স্বচ্ছ তদন্ত এবং সত্য উদঘাটনের পক্ষে রয়েছেন।
















