প্রধান উপদেষ্টার কণ্ঠে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, জানুন কী আছে ২৮ দফায়
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আজ (৫ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করলেন ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সূচনা করা হয় এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় সকল শহীদদের স্মরণে।
ঘোষণাপত্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-আন্দোলন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মোট ২৮টি দফায় সংকলিত এ ঘোষণাপত্র পাঠের সময় ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৃষ্টির মধ্যেই ডায়াসে উঠে ড. ইউনূস বলেন, “এই বৃষ্টি আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত। আমি এই রহমতের মধ্যেই ঘোষণাপত্র পাঠ করবো।”
🔍 ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর মূল বিষয়বস্তু ও ২৮টি দফা সারসংক্ষেপে:
ঘোষণাপত্রটি একটি রাজনৈতিক দলিল হিসেবে দেশের জনগণের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে। নিচে এর সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:
- স্বাধীনতার ভিত্তি: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস পুনরুল্লেখ।
- গণতন্ত্র ও সাম্যের আকাঙ্ক্ষা: ১৯৭২ সালের সংবিধান ও স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা।
- একদলীয় শাসন ও প্রতিক্রিয়া: বাকশাল প্রতিষ্ঠা, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
- ৯০’র গণ-অভ্যুত্থান: সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন।
- ১/১১ ষড়যন্ত্র ও একচ্ছত্র আধিপত্য: রাজনৈতিক চক্রান্ত ও আওয়ামী শাসনের উত্থান।
- ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছর: সংবিধান পরিবর্তন, গুম, খুন, বাকস্বাধীনতার অবদমন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস।
- আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষয়: মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার অভিযোগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র।
- অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও পরিবেশ বিপর্যয়: লুটপাট, ব্যাংকিং খাত ধ্বংস এবং জলবায়ু হুমকি।
- ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলন: বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আন্দোলন দমন এবং দীর্ঘদিনের প্রতিরোধ।
- ভোটাধিকার হরণ: ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচন।
- কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন ও গণবিক্ষোভের উত্তাল রূপ।
- আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ: সামরিক সমর্থন, সহিংসতা, শহীদ ও আহতদের বিস্তৃত বিবরণ।
- আওয়ামী সরকারের পতন: ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ।
- অন্তর্বর্তী সরকার গঠন: সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠন।
- সংবিধান সংস্কার ও নতুন লক্ষ্য: ফ্যাসিবাদহীন, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভিপ্রায়।
- শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: জাতীয় বীর ঘোষণা, আহতদের সুরক্ষা ও পরিবারদের সহায়তা।
- পরবর্তী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
এভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক রূপরেখা হিসেবে সামনে এসেছে, যেখানে বিগত শাসনের ত্রুটি তুলে ধরে ভবিষ্যতের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
🔗 সংক্ষেপে:
এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমি এবং তার ফলাফল তুলে ধরে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য এতে পরিষ্কারভাবে নির্ধারিত হয়েছে।