হিমালয় থেকে আন্দিজ: রাজপথে বিশ্বজুড়ে জেন-জির উত্তাল আন্দোলন
বিশ্বের এক প্রান্তে হিমালয়, আরেক প্রান্তে আন্দিজ পর্বতমালা—এই দুইয়ের মাঝখানে এখন রাজপথ কাঁপাচ্ছে জেনারেশন-জি বা জেন-জির তরুণেরা। বৈষম্য, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামছে তারা। নেপাল থেকে পেরু, মাদাগাস্কার থেকে মরক্কো—তরুণদের এই নতুন প্রজন্মের আন্দোলনে কেঁপে উঠছে নানা দেশের ক্ষমতার মসনদ।
গবেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল সংযুক্তি। তরুণদের মাঝে রাজনীতির প্রচলিত কাঠামোর প্রতি অনাস্থা, সীমাহীন দুর্নীতির প্রতি ক্ষোভ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, সবাইকে একত্র করেছে এই বৈশ্বিক প্রতিবাদের ঢেউয়ে।
মাদাগাস্কারে টানা এক সপ্তাহ ধরে চলা তরুণদের আন্দোলনের পর প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজুয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। বিদ্যুৎ, পানি ও সুশাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ধীরে ধীরে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে।
নেপাল, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া এবং মরক্কোতেও দেখা গেছে একই রকম চিত্র। দুর্নীতি হোক বা বৈষম্য, কিংবা নিপীড়ন—সর্বত্র নেতৃত্ব দিচ্ছে জেন-জি প্রজন্ম। নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের পর ছড়িয়ে পড়া তরুণদের আন্দোলন গড়ায় প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগ পর্যন্ত। ইন্দোনেশিয়ায় মন্ত্রীদের বাড়তি সুবিধা ভোগ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তরুণরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে জেন-জি ঘরানার বিক্ষোভের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সব আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নেতৃত্বহীনতা। নেতৃত্বে থাকছে পুরোপুরি জেন-জি প্রজন্ম—যারা ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জন্ম নিয়েছে এবং ডিজিটাল যুগে বেড়ে উঠেছে।
টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদের বার্তা ও অসাম্যের চিত্র। মন্ত্রীদের সন্তানদের বিলাসিতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কষ্টের তুলনা এখন তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি নেপালে আন্দোলনকারী তরুণরা গেমিং চ্যাট প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ড ব্যবহার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনাও করেছে।
এছাড়াও একটি বিশেষ প্রতীক হয়ে উঠেছে ‘ওয়ান পিস’ মাঙ্গার খুলির ছবি সংবলিত কালো টুপি। পেরু থেকে নেপাল, মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া—সবখানেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই টুপিকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে তরুণেরা।