৭ মাত্রায় ভেঙে পড়বে সিলেটের ৮০% ভবন
রোববার বিকেলে আবারও ভূমিকম্প কাঁপালো সিলেট। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ডাউকি ফল্ট থেকে এই কম্পন সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকায় বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে, যা বড় ধাক্কার সতর্ক সংকেত হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার জানান, বাংলাদেশের ভূমিকম্পের দুটি মূল উৎস রয়েছে—উত্তরের ডাউকি ফল্ট এবং পূর্বের হিমালয় অঞ্চল। সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকায় দীর্ঘদিন বড় ধরনের কম্পন হয়নি। ফলে শক্তি জমে আছে, যা যেকোনো সময় ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে রূপ নিতে পারে।
১৯৯৮ সালের ফরাসি কনসার্টিয়ামের জরিপ অনুযায়ী, সিলেট শত বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন, পাহাড় টিলা কাটা, জলাধার ভরাট ও নিয়ম ভঙ্গ করে বহুতল ভবন নির্মাণ পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেই নগরীর প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শাহজালাল উপশহর, আখালিয়া, বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেটসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এমনকি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ, জাপান ও শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞদের করা এক জরিপে দেখা গেছে, সিলেটের ৭৪ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প-প্রতিরোধী হিসেবে নির্মাণ করা হয়নি। তাই যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, “সিলেট ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে, অথচ উদ্ধার ও ক্ষতি-নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম নেই। এখনই প্রস্তুতি না নিলে বিপর্যয় এড়ানো অসম্ভব।”
উল্লেখ্য, সিলেটের ইতিহাসে ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যা এই অঞ্চলের প্রায় সব বহুতল ভবন ভেঙে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞদের মতে সেই পুনরাবৃত্তির পূর্বাভাস হতে পারে।