ঢাকা ০৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
Logo  দাগেস্তানে রুশ সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাঁচজনের মৃত্যু Logo বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত দিল বিএসএফ Logo মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করায় বরগুনায় বাদীর সাত দিনের জেল Logo  আট বছর পর হিলি বন্দর দিয়ে ভারতীয় আপেল আমদানি পুনরায় শুরু Logo বিএনপির পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে, আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি অপেক্ষায়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Logo ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তাইওয়ানের উপ-রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া Logo তাহসান কি সত্যিই রাজনীতিতে নামছেন Logo গণভোট হলে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে: নির্বাচন কমিশন Logo ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার বিএনপির: আমীর খসরু Logo প্রয়াত গায়ক জুবিন গর্গের স্ত্রী গারিমা সাইকিয়া অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি

৬০০ বছর আগের বিলুপ্ত মোয়া পাখির পুনরুত্থান সম্ভব?

নিজস্ব সংবাদ :

অস্কারজয়ী পরিচালক পিটার জ্যাকসন (লেজেন্ডারি সিনেমা দ্য লর্ড অব দ্য রিংস, দ্য হবিট) শৈশব থেকেই কল্পনা করতেন—বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না? জেট প্যাক বা উড়ন্ত গাড়ি যেমন এখনও বাস্তব হয়নি, তেমনি ‘ডি-এক্সটিংশন’ (বিলুপ্ত প্রাণীর পুনরুজ্জীবন) প্রযুক্তিও একসময় কল্পনা ছিল। কিন্তু এখন তা বাস্তব হয়ে উঠছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে, ডালাসভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি কলোসাল বায়োসায়েন্স ঘোষণা দেয় যে তারা ১০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ডায়ার উলফ (এক প্রকার ভয়ঙ্কর নেকড়ে) ফিরিয়ে এনেছে। বর্তমানে তিনটি ডায়ার উলফ ২,০০০ একরের একটি গোপন অভয়ারণ্যে বাস করছে।

এরপর কোম্পানিটি ডোডো পাখি, উলি ম্যামথ, তাসমানিয়ান টাইগারসহ (থাইলাসিন) আরও কয়েকটি প্রজাতি ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

এবার তাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে মোয়া—একটি ১২ ফুট (৩.৬ মিটার) উঁচু, ৫০০ পাউন্ড (২৩০ কেজি) ওজনের উড়তে অক্ষম দৈত্যাকার পাখি, যা ৬০০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে মানুষের শিকারে বিলুপ্ত হয়।

পিটার জ্যাকসন, যিনি নিজেও নিউজিল্যান্ডের নাগরিক, কলোসালের বিনিয়োগকারী এবং এই প্রকল্পে মাওরি আদিবাসীদের গবেষণা কেন্দ্র (Ngāi Tahu)-এর সঙ্গে সহযোগিতার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।

মাওরি আদিবাসীদের গবেষণা কেন্দ্রের প্রত্নতত্ত্ববিদ কাইল ডেভিস বলেন, ‘মোয়া আমাদের গোষ্ঠীর পুরাণ ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই গবেষণায় অংশগ্রহণ আমাদের জন্য গর্বের।’

কলোসালের সিইও বেন ল্যাম বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে মাওরি সম্প্রদায়ের উদ্যোগ। আমরা তাদের গবেষণা দলেরই অংশ হয়ে গেছি।’

মোয়া ছিল ‘কর্নারস্টোন স্পিশিজ’—এই পাখিগুলো জঙ্গলের গঠন ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের বিলুপ্তির ফলে হাস্টের ঈগলসহ (যারা শুধু মোয়া শিকার করত) বেশ কিছু প্রজাতিও হারিয়ে যায়। মোয়া ফিরে এলে নিউজিল্যান্ডের বনাঞ্চলের প্রাচীন ভারসাম্য কিছুটা ফিরে পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।

 

কলোসালের প্রযুক্তি শুধু বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়েই আনছে না, বরং বর্তমানের বিপন্ন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য বাড়াতেও সাহায্য করছে। যেমন: ডায়ার উলফ প্রকল্পের জ্ঞান ব্যবহার করে লাল নেকড়ের জিনোমে বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে।

ক্যান্টারবারি মিউজিয়ামের কিউরেটর পল স্কোফিল্ড (যিনি মোয়ার জিনোম নিয়ে ২০টি গবেষণাপত্র লিখেছেন) বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের কিছু পাখি জিনগত বৈচিত্র্যহীনতার কারণে বিপন্ন। কলোসালের প্রযুক্তি তাদের বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারে।’

তবে মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনতে এখনও সময় লাগবে। তবে কলোসাল ইতিমধ্যে মোয়ার জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু করেছে এবং আদিবাসী মাওরি সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এই ঐতিহাসিক প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছে।

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:২৯:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
১০০ বার পড়া হয়েছে

৬০০ বছর আগের বিলুপ্ত মোয়া পাখির পুনরুত্থান সম্ভব?

আপডেট সময় ০৭:২৯:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

অস্কারজয়ী পরিচালক পিটার জ্যাকসন (লেজেন্ডারি সিনেমা দ্য লর্ড অব দ্য রিংস, দ্য হবিট) শৈশব থেকেই কল্পনা করতেন—বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না? জেট প্যাক বা উড়ন্ত গাড়ি যেমন এখনও বাস্তব হয়নি, তেমনি ‘ডি-এক্সটিংশন’ (বিলুপ্ত প্রাণীর পুনরুজ্জীবন) প্রযুক্তিও একসময় কল্পনা ছিল। কিন্তু এখন তা বাস্তব হয়ে উঠছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে, ডালাসভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি কলোসাল বায়োসায়েন্স ঘোষণা দেয় যে তারা ১০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ডায়ার উলফ (এক প্রকার ভয়ঙ্কর নেকড়ে) ফিরিয়ে এনেছে। বর্তমানে তিনটি ডায়ার উলফ ২,০০০ একরের একটি গোপন অভয়ারণ্যে বাস করছে।

এরপর কোম্পানিটি ডোডো পাখি, উলি ম্যামথ, তাসমানিয়ান টাইগারসহ (থাইলাসিন) আরও কয়েকটি প্রজাতি ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

এবার তাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে মোয়া—একটি ১২ ফুট (৩.৬ মিটার) উঁচু, ৫০০ পাউন্ড (২৩০ কেজি) ওজনের উড়তে অক্ষম দৈত্যাকার পাখি, যা ৬০০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে মানুষের শিকারে বিলুপ্ত হয়।

পিটার জ্যাকসন, যিনি নিজেও নিউজিল্যান্ডের নাগরিক, কলোসালের বিনিয়োগকারী এবং এই প্রকল্পে মাওরি আদিবাসীদের গবেষণা কেন্দ্র (Ngāi Tahu)-এর সঙ্গে সহযোগিতার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।

মাওরি আদিবাসীদের গবেষণা কেন্দ্রের প্রত্নতত্ত্ববিদ কাইল ডেভিস বলেন, ‘মোয়া আমাদের গোষ্ঠীর পুরাণ ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই গবেষণায় অংশগ্রহণ আমাদের জন্য গর্বের।’

কলোসালের সিইও বেন ল্যাম বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে মাওরি সম্প্রদায়ের উদ্যোগ। আমরা তাদের গবেষণা দলেরই অংশ হয়ে গেছি।’

মোয়া ছিল ‘কর্নারস্টোন স্পিশিজ’—এই পাখিগুলো জঙ্গলের গঠন ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের বিলুপ্তির ফলে হাস্টের ঈগলসহ (যারা শুধু মোয়া শিকার করত) বেশ কিছু প্রজাতিও হারিয়ে যায়। মোয়া ফিরে এলে নিউজিল্যান্ডের বনাঞ্চলের প্রাচীন ভারসাম্য কিছুটা ফিরে পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।

 

কলোসালের প্রযুক্তি শুধু বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়েই আনছে না, বরং বর্তমানের বিপন্ন প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য বাড়াতেও সাহায্য করছে। যেমন: ডায়ার উলফ প্রকল্পের জ্ঞান ব্যবহার করে লাল নেকড়ের জিনোমে বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে।

ক্যান্টারবারি মিউজিয়ামের কিউরেটর পল স্কোফিল্ড (যিনি মোয়ার জিনোম নিয়ে ২০টি গবেষণাপত্র লিখেছেন) বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের কিছু পাখি জিনগত বৈচিত্র্যহীনতার কারণে বিপন্ন। কলোসালের প্রযুক্তি তাদের বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারে।’

তবে মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনতে এখনও সময় লাগবে। তবে কলোসাল ইতিমধ্যে মোয়ার জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু করেছে এবং আদিবাসী মাওরি সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এই ঐতিহাসিক প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছে।

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন।