টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যা: কেন এত দ্রুত প্রাণঘাতী রূপ নিল?
চরম বৃষ্টিপাতের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি ঘটে গেছে ভয়াবহ বন্যা, যা ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়েছে। বিশেষ করে ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এ থাকা গ্রীষ্মকালীন ছুটির শিশুদের জন্য এটি এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোররাতে, ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে নদীর বাঁধ ছাপিয়ে পানির স্রোত প্রবল গতিতে কেবিনে আঘাত হানে—কোনো রকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই।
কারণ ও বিশ্লেষণ:
বন্যার নেপথ্যে একাধিক প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণ রয়েছে। মেক্সিকো থেকে উঠে আসা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় টেক্সাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা নিয়ে আসে, যা পাহাড়ি অঞ্চলের ওপর উঠে ভয়ংকর বজ্রমেঘ তৈরি করে। এই ঝড় ধীরে চলে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র ৩–৬ ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ ইঞ্চি (১২৫–২৫০ মিমি) বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ-মধ্য কার কাউন্টিতে। কিছু এলাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ২১ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় পানি দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসে এবং নদীর পানি হঠাৎ করেই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যায়। অনেক পরিবার তখন ঘুমিয়ে থাকায় বা সতর্কতা পেতে দেরি হওয়ায় যথাসময়ে সরে যেতে পারেননি।
প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতি:
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমপক্ষে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ২৭ জনই শিশু ক্যাম্প থেকে। অনেকেই এখনো নিখোঁজ। বন্যায় কেবিন, গাছপালা, কায়াক এবং বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শিশু ছিল নদীর খুব কাছাকাছি কেবিনে, যেখানে দ্রুত পানি পৌঁছে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৃষ্টির এই অস্বাভাবিকতা জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ইঙ্গিত বহন করে। মেক্সিকো উপসাগরের উষ্ণ পানির কারণে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যা ঝড়কে আরও শক্তিশালী করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে এমন চরম আবহাওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাবে।