ঢাকা ০৪:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুলাই বিপ্লবের হটস্পট ছিল উত্তরা, দিতে হয় কঠিন মূল্যও

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

জুলাই বিপ্লবের হটস্পট ছিল উত্তরা, দিতে হয় কঠিন মূল্যও।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট ছিল রাজধানীর উত্তরা। সেখানে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্ত দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন ছাত্র-জনতা। তবে দিতে হয় কঠিন মূল্যও। অনেকের এখনও সয়তে হচ্ছে বুলেটের কঠিন যন্ত্রণা, কারও হয়েছে অঙ্গহানি। অনেকে আবার সন্তান কিংবা প্রিয়জনকে হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব।

জুলাইজুড়ে উত্তরা ছিল রণক্ষেত্র। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাধারণ মানুষও। একদিকে আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলি, অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি। ফলাফল মুগ্ধসহ অসংখ্য তাজা প্রাণের অকাল সমাপ্তি।

 

চার বছরের ছোট্ট আলিফা জানালায় মুখ গুঁজে এখনো খুঁজে ফেরে বাবাকে। বছর দশেকের ছোট্ট ছেলে আলভীও শেষবারের মতো দেখতে পায়নি বাবাকে। ১৮ জুলাই উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে নিহত হওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর সন্ধান আসে আসাদুল্লাহর। কিন্তু ততদিনে আঞ্জুমান মুফিদুলের কল্যাণে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন রায়ের বাজার কবরস্থানে।
 
এই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে, তাদের কাছে এখনও দিনগুলো দুঃস্বপ্নের মতো। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বুক তাক করে যেভাবে করা হয়েছে গুলি, তা ভেবে এখনও রীতিমতো আঁতকে ওঠেন তারা।
 
 
এমনই একজন আসাদুজ্জামান আকাশ। ১৮ জুলাই, যেদিন উত্তরা পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে, ঠিক সেদিন একটি বুলেট এসে তার পেটের সামনে দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় পিঠ দিয়ে। প্রাণে বাঁচলেও এখনও আছে তীব্র যন্ত্রণা।
 
পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আইইউটির ছাত্র তানভীন। তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিজ হাতে বানানো ড্রোন। শুধু কি তাই! ঘরজুড়ে অনেক অনেক সরঞ্জাম এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তবে এখন আর নেই, একসময় এগুলোর নেশায় মত্ত থাকা আইইউটির ছাত্র তানভীন। জুলাইয়ের ১৮ তারিখ পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার দেহ। মা এখনও স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। বাবারও রাষ্ট্রের কাছে আর নেই কোনো চাওয়া।
 
 
এই যন্ত্রণা ভুলে কবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব হবে তা জানা নেই পরিবারের কারো। এই তরুণরা কখনও হয়েছেন হামলার শিকার কখনও যন্ত্রণায় কাতরানো বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। এখন তাদের চাওয়া, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মান পাবে আহতরা।
 
এদিকে গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল থেকে প্রথম ধাপে ৮৫৮ জন শহীদ এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহতের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
 
জুলাই বিপ্লবের ধারাবাহিকথায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বিদেশে পালিয়ে যান। দেশে থাকা মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:১২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
১ বার পড়া হয়েছে

জুলাই বিপ্লবের হটস্পট ছিল উত্তরা, দিতে হয় কঠিন মূল্যও

আপডেট সময় ১২:১২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জুলাই বিপ্লবের হটস্পট ছিল উত্তরা, দিতে হয় কঠিন মূল্যও।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট ছিল রাজধানীর উত্তরা। সেখানে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্ত দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন ছাত্র-জনতা। তবে দিতে হয় কঠিন মূল্যও। অনেকের এখনও সয়তে হচ্ছে বুলেটের কঠিন যন্ত্রণা, কারও হয়েছে অঙ্গহানি। অনেকে আবার সন্তান কিংবা প্রিয়জনকে হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব।

জুলাইজুড়ে উত্তরা ছিল রণক্ষেত্র। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাধারণ মানুষও। একদিকে আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলি, অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি। ফলাফল মুগ্ধসহ অসংখ্য তাজা প্রাণের অকাল সমাপ্তি।

 

চার বছরের ছোট্ট আলিফা জানালায় মুখ গুঁজে এখনো খুঁজে ফেরে বাবাকে। বছর দশেকের ছোট্ট ছেলে আলভীও শেষবারের মতো দেখতে পায়নি বাবাকে। ১৮ জুলাই উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে নিহত হওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর সন্ধান আসে আসাদুল্লাহর। কিন্তু ততদিনে আঞ্জুমান মুফিদুলের কল্যাণে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন রায়ের বাজার কবরস্থানে।
 
এই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে, তাদের কাছে এখনও দিনগুলো দুঃস্বপ্নের মতো। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বুক তাক করে যেভাবে করা হয়েছে গুলি, তা ভেবে এখনও রীতিমতো আঁতকে ওঠেন তারা।
 
 
এমনই একজন আসাদুজ্জামান আকাশ। ১৮ জুলাই, যেদিন উত্তরা পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে, ঠিক সেদিন একটি বুলেট এসে তার পেটের সামনে দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় পিঠ দিয়ে। প্রাণে বাঁচলেও এখনও আছে তীব্র যন্ত্রণা।
 
পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আইইউটির ছাত্র তানভীন। তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিজ হাতে বানানো ড্রোন। শুধু কি তাই! ঘরজুড়ে অনেক অনেক সরঞ্জাম এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তবে এখন আর নেই, একসময় এগুলোর নেশায় মত্ত থাকা আইইউটির ছাত্র তানভীন। জুলাইয়ের ১৮ তারিখ পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার দেহ। মা এখনও স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। বাবারও রাষ্ট্রের কাছে আর নেই কোনো চাওয়া।
 
 
এই যন্ত্রণা ভুলে কবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব হবে তা জানা নেই পরিবারের কারো। এই তরুণরা কখনও হয়েছেন হামলার শিকার কখনও যন্ত্রণায় কাতরানো বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। এখন তাদের চাওয়া, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মান পাবে আহতরা।
 
এদিকে গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল থেকে প্রথম ধাপে ৮৫৮ জন শহীদ এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহতের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
 
জুলাই বিপ্লবের ধারাবাহিকথায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বিদেশে পালিয়ে যান। দেশে থাকা মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে।