ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে চাপে পড়ে টাকা ফিরিয়ে দিলেন জামায়াত নেতা
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামায়াতে ইসলামী শাখার সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মুখে পড়ার পর শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তিনি টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন।
ভুক্তভোগী দুই ব্যক্তি ২ আগস্ট জামায়াতের উপজেলা ও জেলা আমিরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এরপর দলের ভেতরে চাপের মুখে সিরাজুলকে ফেরত দিতে হয় গ্রহণকৃত অর্থ। ৬ আগস্ট রাতে জামায়াত কার্যালয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনা শেষে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন, মাসুদ রানা, নিজেও জামায়াতের দমোদরপুর ইউনিয়ন শাখার ৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, দলীয় নেতৃত্বে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। ওই পোস্টটি ভাইরাল হলে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে এবং স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পাশাপাশি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের কথোপকথনের একটি ভিডিও ক্লিপ ও অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, সিরাজুল ইসলাম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সফলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও পরীক্ষায় পাস না করায় টাকা ফেরত চাইলে নানা অজুহাত দেওয়া হয়।
অন্য আরেক ভুক্তভোগী, আব্দুল হাদী, জানান সিরাজুল তার কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ১৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। ব্যর্থতার পর তিনিও টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিলে পরে দলীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় ফেরত পান।
এছাড়া পাতিল্যাকুড়া গ্রামের মফিজল হক অভিযোগ করেন, গত ৮ জুলাই সন্ধ্যায় সিরাজুল ইসলাম ২০-২৫ জন লোক নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালান এবং তার ছেলে তাজুল ইসলামকে অপহরণের চেষ্টা করেন। স্থানীয়দের সহায়তায় অপহরণ ব্যর্থ হলেও বিষয়টি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সিরাজুল দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক চাকরিপ্রার্থী সিরাজুলকে ১৭ লাখ টাকার মতো দেন এবং পরবর্তীতে বৈঠকে সিরাজুল বিষয়টি স্বীকার করেন। বৈঠকের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াত আমির মো. এরশাদুল হক ইমন জানান, এটি দলীয় বিষয় এবং অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান হয়েছে। তার দাবি, সিরাজুল নিজে টাকা নেননি, কেবল মধ্যস্থতা করেছেন।
জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, সিরাজুলের বিরুদ্ধে তিনটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সিরাজুল ইসলাম অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তিনি শুধু চাকরিপ্রার্থীদের একজন তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে কোনও টাকা গ্রহণ করেননি। ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে তার বক্তব্য, এসব ঘটনা তার সেক্রেটারি হওয়ার আগের এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যেই এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।