বিদেশে চাপে মোদি বন্ধু আদানি
বিদেশে চাপে মোদি বন্ধু আদানি।
নিয়ন্ত্রণ করেন ভারতের অন্তত ১৩টি সামুদ্রিক বন্দর, দেখভাল করার দায়িত্ব রয়েছে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের। রয়েছে ৬টি কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রসহ ভারতের বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসা। পরিচালনা করছেন বেশ কয়েকটি মেগাপ্রজেক্ট। ভারতীয় অর্থনীতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত গৌতম আদানির নাম। কিন্তু দেশে সুবিধা পেলেও বিদেশে চাপের মুখে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি।
আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে গেল সপ্তাহের শেষে ভারতীয় এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করে মার্কিন বিচার বিভাগ। জারি করা হয় গ্রেফতারি পরোয়ানাও। বলা হয়, প্রকল্পের চুক্তি পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের আড়াইশ’ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছেন আদানি ও তার প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মী। ভুয়া তথ্য ও নথি দেখিয়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেয়ার অভিযোগও আনা হয় ৬২ বছর বয়সী এই বিজনেস টাইকুনের বিরুদ্ধে। গেলবছরই যার আভাস দেয় মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে তকমা পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছেন মোদিবন্ধু আদানি।
মার্কিন এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকে ঘিরে আদানি গ্রুপের সাথে দু’টি চুক্তি বাতিল করে কেনিয়া সরকার। যার আনুমানিক মূল্য আড়াইশ’ কোটি ডলারেরও বেশি। বাতিল করা হয় বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি সংক্রান্ত চুক্তি দু’টি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-কেনিয়ার পর অস্ট্রেলিয়াতেও তোপের মুখে আদানি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বর্ণবৈষম্যের অভিযোগে দেশটির হিউম্যান রাইটস কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে আদিবাসী গোষ্ঠীরা। এর আগেও, পরিবেশগত ঝুঁকি ও আদিবাসীদের পবিত্র ভূমি বিনষ্টে একাধিক অভিযোগ আনা হয় কুইন্সল্যান্ডে আদানি গ্রুপের কয়লা খনির বিরুদ্ধে।
একের পর এক অভিযোগ আর জনরোষের মুখে বড় ধাক্কা লেগেছে আদানি সাম্রাজ্যে। দেশ-বিদেশে থাকা প্রায় ১৬৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মোদির ঘনিষ্ঠভাজন গৌতম আদানি। এরইমধ্যে আনুমানিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। ১০ কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ বিলিয়ন ডলারে। দ্বিতীয় দিনের মতোও দরপতন অব্যাহত আদানি গ্রুপের শেয়ারগুলোতে।
তবে গৌতম আদানির কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটা দিল আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এস অ্যান্ড পি। আদানি গ্রুপের ৩টি কোম্পানির ঋণমান কমিয়ে নেতিবাচক করেছে সংস্থাটি। যার অর্থ দাঁড়ায়, আদানি নিয়ন্ত্রণাধীন ঐ কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সংশয় থেকে যাবে অর্থ পরিশোধের।
এমন ঘটনার জেরে দেশেও সুখে নেই ধনাঢ্য এই ব্যক্তি। গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন রাহুল গান্ধীসহ একাধিক বিরোধী নেতা। যদিও, মোদি-আদানির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কারণে তা আশাতীত।