ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, দফারফার চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, দফারফার চেষ্টা।

শাসনের নামে এক ছাত্রীকে (১৪) যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একে এম মহিউদ্দীনের (৫৫) বিরুদ্ধে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। একই সময় যৌন হয়রানির ঘটনাটি থামাচাপা দিতে বিদ্যালয়ের কক্ষে সালিশের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন ও সালিশের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের বাধা দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন।


গত রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।


ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের সিঁড়ির ওপর রাকিব শেখ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন সহকারী শিক্ষক হাসানুজ্জামান। এ সময় ওই শিক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীনের জিম্মায় রাখেন অন্য শিক্ষকরা।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন তার কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। একপর্যায় সহ্য করতে না পেরে ওই ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে ওই ছাত্রী অন্য শিক্ষকদের কাছে তাকে যৌন হয়রানির বিষয়টি খুলে বলে।

এদিকে এ ঘটনার পরদিন সোমবার সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন করে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী। একই সময় যৌন হয়রানির ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারকে নিয়ে বিদ্যালয়ের কক্ষে শালিসের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

খবর পেয়ে মানববন্ধন ও শালিসের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের বাধা দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।

ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এক ছাত্রের সঙ্গে ওই ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ওই ছাত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসেন অন্য শিক্ষকরা। এ সময় ওই ছাত্রীকে শাসন করার পর সে এসব অভিযোগ তুলেছে।’

সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ায় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি মাঠের মধ্যে ঘটেছে। আমি তখন স্কুলের রুমে ছিলাম। তাই কে কি করেছে তা দেখিনি।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রথমে স্কুলের এক ছাত্র ও এক ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় পান শিক্ষকরা। পরে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সকালে স্কুল পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকরা ও ভুক্তভোগীর পরিবার শালিসে বসেছিল। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও করলে তাদের আটকে রাখেন সেখানকার লোকজন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা কোনো অভিযোগ থানায় দেবেন না। সম্ভবত তারা মীমাংসা করে ফেলবেন। এখন তারা যদি অভিযোগ না দেন, তাহলে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নেব।’

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি অভিযোগ না করেন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি ওই প্রধান শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
  

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
৪ বার পড়া হয়েছে

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, দফারফার চেষ্টা

আপডেট সময় ০৭:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, দফারফার চেষ্টা।

শাসনের নামে এক ছাত্রীকে (১৪) যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একে এম মহিউদ্দীনের (৫৫) বিরুদ্ধে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। একই সময় যৌন হয়রানির ঘটনাটি থামাচাপা দিতে বিদ্যালয়ের কক্ষে সালিশের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন ও সালিশের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের বাধা দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন।


গত রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।


ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের সিঁড়ির ওপর রাকিব শেখ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন সহকারী শিক্ষক হাসানুজ্জামান। এ সময় ওই শিক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীনের জিম্মায় রাখেন অন্য শিক্ষকরা।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন তার কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। একপর্যায় সহ্য করতে না পেরে ওই ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে ওই ছাত্রী অন্য শিক্ষকদের কাছে তাকে যৌন হয়রানির বিষয়টি খুলে বলে।

এদিকে এ ঘটনার পরদিন সোমবার সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন করে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী। একই সময় যৌন হয়রানির ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারকে নিয়ে বিদ্যালয়ের কক্ষে শালিসের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

খবর পেয়ে মানববন্ধন ও শালিসের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের বাধা দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।

ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এক ছাত্রের সঙ্গে ওই ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ওই ছাত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসেন অন্য শিক্ষকরা। এ সময় ওই ছাত্রীকে শাসন করার পর সে এসব অভিযোগ তুলেছে।’

সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ায় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি মাঠের মধ্যে ঘটেছে। আমি তখন স্কুলের রুমে ছিলাম। তাই কে কি করেছে তা দেখিনি।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রথমে স্কুলের এক ছাত্র ও এক ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় পান শিক্ষকরা। পরে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সকালে স্কুল পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকরা ও ভুক্তভোগীর পরিবার শালিসে বসেছিল। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও করলে তাদের আটকে রাখেন সেখানকার লোকজন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা কোনো অভিযোগ থানায় দেবেন না। সম্ভবত তারা মীমাংসা করে ফেলবেন। এখন তারা যদি অভিযোগ না দেন, তাহলে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নেব।’

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি অভিযোগ না করেন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি ওই প্রধান শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’