মিয়ানমারের সঙ্গে ২০১২ সালে আর ভারতের সঙ্গে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা জয় আশা জাগিয়েছিল বহুমাত্রিক সম্ভাবনার। তবে কার্যকর উদ্যোগের অভাবে এক যুগেও সমুদ্রবক্ষ তথা সুনীল অর্থনীতির সুফল পায়নি দেশ।
স্থবিরতা আর সময়ক্ষেপণের নানা পর্ব কাটিয়ে অবশেষে গেল মার্চে গভীর সমুদ্রে ১৫টি আর অগভীর সমুদ্রে ৯টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এতে সাড়া দিয়ে দরপত্রের নথি সংগ্রহ করেছিল সাতটি বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি। যার মধ্যে ছিল দুটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিসহ চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান, থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান। এরপরই সামনে আসে সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের আশাজাগানিয়া প্রশ্ন, তবে সাঙ্গুর পর আবারও খুলতে যাচ্ছে সমুদ্র থেকে তেল-গ্যাস পাওয়ার দুয়ার?
আকর্ষণীয় প্রস্তাবে মন কাড়বে বিনিয়োগকারীদের, নীতিনির্ধারকদের এমন প্রত্যাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আরও এক দফা হোঁচট খেলো পেট্রোবাংলা। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত শেষ সময় থাকলেও দরপত্র জমা দেয়নি কোনো বহুজাতিক কোম্পানি।
শুরুতে আগ্রহ দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত কেন পিছিয়ে গেল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো? বিশ্লেষকরা মনে করেন, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, বৈশ্বিক অস্থিরতা আর অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হতে পারে এর কারণ।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মু তামিম বলেন, ‘সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতি রয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেহেতু বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং সামনেও নতুন সরকার কোথায় কখন গঠিত হবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে যে কোনো বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের ব্যাপারে চিন্তা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে কোনো কোম্পানি এলো না, তাই দ্রুত সার্ভেগুলো করে ফেললে আমরাও বুঝবো আদৌ সভায় যাবো কি না। এখন ইনফরমালি যোগাযোগ করা যেতে পারে, কেন তারা পিছিয়ে গেল।
ভূতত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানি শুধু বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে না পৃথিবীর সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। ফলে এইসব ব্যবসায়ী সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক এলাকায় যাওয়ার প্রবণতা থাকে। বিদেশি কোম্পানি আশার জন্য উদ্বেগ হয়ে রয়েছে, তা তো না। ফলে তাদের আগ্রহী করে বাংলাদেশে আনতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।