রিজভী বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (সাবেক) মৃত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের চেয়েও ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। সব জেনেশুনেই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। গণমাধ্যম দিয়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।’
গুম, খুন ও ক্রসফায়ার একের পর এক অপকর্ম যারা করেছেন, তাকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত- এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনার মাধ্যমে উপনিবেশ কায়েমের চেষ্টা করেছে তারা। ভারতের নীতি শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তবে আমরা এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাব।’
রিজভী বলেন, আমরা শুনছি একটা রাজকীয় দল করার চেষ্টা চলছে। কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন, এটা যদি গোয়েন্দারা ঠিক করে দেন, তাহলে হাসিনার সঙ্গে পার্থক্য কী থাকল। এসব কিন্তু দেশের মানুষ মেনে নেবে না। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন, এরশাদ ও হাসিনার মতো একই সংস্কৃতির যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে কী পরিবর্তন এলো।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার সংজ্ঞা কী হতে পারে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আর সাইবার সুরক্ষা আইনের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। সাইবার সুরক্ষা-২০২৪ যদি এদের হাতে থাকে, তা হলে বাকস্বাধীনতা আবারও রুদ্ধ হবে। সংস্কারের যে কী রূপ হবে, কোন দিকে যাবে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ সরকারকে আমরাই তো প্রতিষ্ঠা করেছি। যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি তা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন আয়োজন করুন।
তিনি আরও বলেন, যারা সমালোচনা করেন ‘কিছুই করেন নাই ’তারা করে দেখান। সমালোচনা করারও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই আমাদের বিজয়ী হতে হবে। জেতার জন্য যেমন সংগঠন দরকার, তেমন সংগঠন করতে হবে আমাদের। সাবধান থাকতে হবে মিথ্যা সমালোচনার মাধ্যমে যারা অপপ্রচার চলাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় সচিবালয়ে আগুন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর যারা ১৬ বছর গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা এখনও কীভাবে সচিবালয়ে বসে থাকেন- এমন প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন,স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাই, এখনও যারা সচিবালয়ে আগুনের সাথে সম্পৃক্ত তাদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর যারা ১৬ বছর গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন, তারা এখনও কীভাবে সচিবালয়ে বসে থাকেন?
গণতন্ত্র ফোরামের বক্তারা শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সীমাহীন দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে শিগগিরই নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দেয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া বক্তারা বলেন, ‘গতকাল রাতে সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত।’
বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। এ আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় সোহান জামান নয়ন নামে এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত হন। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে আরও এক কর্মী আহত হয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ৬টি মন্ত্রণালয় ও একাধিক বিভাগের অফিস রয়েছে। সেগুলো হলো: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। প্রথমে সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সচিবালয়ের গেটের সামনে অবস্থান নেন। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।