নুরাল পাগলের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশদাতা আব্দুল লতিফ গ্রেফতার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিতর্কিত ধর্মীয় ব্যক্তি নুরাল হক ওরফে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ (৩৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, নুরাল পাগলের বাড়ি ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি, হত্যাচেষ্টা এবং কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আব্দুল লতিফ অন্যতম অভিযুক্ত।
এর আগে গ্রেফতার হওয়া অপু কাজী নামের একজন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানান, আব্দুল লতিফ হুজুরের নির্দেশেই কবর খনন করে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
আব্দুল লতিফ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড় ঠাকুরকান্দির মাওলানা বাহাউদ্দিনের ছেলে। এই মামলায় এরই মধ্যে আরও একজন—গোয়ালন্দের আলম চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা অভি মন্ডল রঞ্জু (২৯) —কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, নুরাল পাগলের অনুসারী নিহত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা সোমবার দিবাগত রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা ৩,৫০০–৪,০০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাকা হয়। এতে অংশ নেওয়া ‘তৌহিদি জনতা’ দাবি তোলে কবর উঁচু থেকে নিচু করা, কবরের রঙ পরিবর্তন এবং দরবার শরীফে ইমাম মাহদি সম্পর্কিত লেখাসমূহ সরানোর।
বিক্ষোভের একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ওসির গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২ জন কর্মকর্তা আহত হন।
পরবর্তীতে তারা নুরাল পাগলের দরবারে হামলা চালায়, গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দরবারের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষোভকারীরা পরে কবর থেকে মরদেহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে গিয়ে সেটি পুড়িয়ে ফেলে।
ঘটনার সময় সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই হাসপাতালে নুরাল পাগলের অনুসারী রাসেল মোল্লা (২৮) মারা যান। তিনি দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে।
উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল হক (নুরাল পাগল)। তার মৃত্যুর পর তার নিজ প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফে কাবা শরীফের আদলে নির্মিত প্রায় ১২ ফুট উঁচু একটি বেদিতে তাকে দাফন করা হয়, যা ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে।