তরুণদের মধ্যে বাড়ছে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি: কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়
একসময় ফুসফুস ক্যান্সারকে মূলত ধূমপান–সম্পর্কিত রোগ হিসেবে ধরা হতো, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তরুণদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এমনকি যারা কখনও ধূমপান করেনি, তারাও আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তরুণদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণসমূহ
🔸 ধূমপান:
এখনো ফুসফুস ক্যান্সারের ৮০–৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ধূমপানকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেলেও, ধূমপান না করা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন—যা ইঙ্গিত দেয়, অন্য ঝুঁকি উপাদানও রয়েছে।
🔸 পরিবেশগত দূষণ:
- রাডন গ্যাস: ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম ক্ষয়ের ফলে তৈরি এই গ্যাস বাসাবাড়িতে জমে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ক্ষতি করতে পারে।
- বায়ু দূষণ ও সূক্ষ্ম ধূলিকণা: যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প এলাকার দূষণ ও পরিবেশে থাকা সূক্ষ্ম কণা ফুসফুসের ক্ষতি করে।
- রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ: ডিজেল, অ্যাসবেস্টস, সিলিকা বা আর্সেনিকের মতো পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
🔸 রান্নার ধোঁয়া:
গ্রামীণ নারীরা যাঁরা কাঠ বা কয়লা ব্যবহার করে রান্না করেন এবং রান্নাঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই—তাঁদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
🔸 জেনেটিক বা বংশগত উপাদান:
কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জিন মিউটেশনের কারণে তরুণদের মধ্যে এই ক্যান্সার দেখা যায়। এছাড়া কিছু ভাইরাস যেমন এইচপিভি বা এপস্টেইন–বার ভাইরাসের সঙ্গেও সম্পর্ক থাকতে পারে।
কোন লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হবেন?
প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ খুব একটা স্পষ্ট না–ও হতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ দেখা গেলে সতর্ক হওয়া জরুরি:
- কফের সঙ্গে রক্ত বা বাদামি রঙের শ্লেষ্মা
- কাশির সময় বা শ্বাস নিতে গেলে বুক ব্যথা
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি বা শ্বাসকষ্ট
- বারবার সংক্রমণ (যেমন ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া)
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
- কণ্ঠস্বর পরিবর্তন বা গলা ব্যথা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
রোগটি যদি শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা বা গলার লসিকা গ্রন্থি ফোলার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
✅ ধূমপান ত্যাগ:
ধূমপান থেকে দূরে থাকাই ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ধূমপান ছাড়তে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।
✅ পরোক্ষ ধূমপান এড়ানো:
ধূমপায়ীদের আশপাশে না থাকা ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
✅ রাডন গ্যাস পরীক্ষা:
বাসাবাড়িতে রাডন গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
✅ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা:
রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়াতে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার আবশ্যক, বিশেষ করে যারা কারখানা, নির্মাণ কিংবা যানবাহন মেরামতের কাজে যুক্ত।
✅ রান্নাঘরে সঠিক বায়ু চলাচল:
বায়ু চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে রান্নার ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, যা বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
✅ স্বাস্থ্যকর জীবনধারা:
ফলমূল ও শাকসবজি সমৃদ্ধ সুষম খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
🔔দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তৈরি। রোগ–সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: তথ্য বিভিন্ন স্বীকৃত স্বাস্থ্যগবেষণা ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত।