শেষ ফোনে বাবাকে জানায় আগুনের খবর, তারপর আর ফেরেনি আলো
রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ‘আরিয়ান ফ্যাশন’ পোশাক কারখানায় ভয়াবহ আগুনে নিখোঁজ রয়েছেন দম্পতি মার্জিয়া সুলতানা আলো (১৮) ও মো. জয় (২২)। আগুনের মধ্যে আটকে পড়ে বাবাকে ফোনে শেষ কথা বলেছিলেন আলো—‘কারখানায় আগুন লেগেছে, আমরা আটকে গেছি, বের হতে পারছি না।’ এরপর ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়।
১ অক্টোবর তারা দুজনই এই কারখানায় যোগ দেন। জয় অপারেটর হিসেবে আর আলো হেলপার হিসেবে একই ফ্লোরে কাজ করতেন। তাদের বাড়ি নেত্রকোণার মদন উপজেলায় হলেও তারা থাকতেন কারখানার অল্প দূরে রূপনগরের ১২ নম্বর সড়কের এক টিনশেড বস্তিতে।
আলোর মা ইয়াসমিন বেগম জানান, বিকট শব্দ শুনেই জানতে পারেন গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে। তিনি দৌড়ে যান ঘটনাস্থলে। আগুনে জ্বলতে থাকা ভবন চোখের সামনে দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।
আলোর বাবা মো. সুলতান বলেন, “খবর পেয়ে মেয়েকে ফোন দিই। রিসিভ করেই বলে আগুন লেগেছে, বের হতে পারছে না। আমি বলি, চেষ্টা করো, অন্যদের মতো বের হয়ে যাও। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো সাড়া পাইনি।”
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত ‘আরিয়ান ফ্যাশন’ ও পাশের কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, আগুনের সূত্রপাত হয় কেমিক্যালের টিনশেড গোডাউন থেকে, পরে তা গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিখোঁজদের স্বজনরা এখনও তাদের খোঁজে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন। জয়ের মা শিউলী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ভালো জীবনের আশায় ছেলে এই কারখানায় যোগ দিয়েছিল। এখন ছেলে-বউ কারো খোঁজ পাচ্ছি না।”
একই কারখানায় কাজ করতেন আরেক তরুণী মুন্নী আক্তার (১৬)। তিনিও নিখোঁজ। তাঁর স্বামী নাঈম এবং শাশুড়ি তাহেরা বেগম ছবি হাতে খুঁজে ফিরছেন। তাহেরা বলেন, “সকালে নাশতা খেয়ে কাজে গিয়েছিল। তারপর শুনি আগুন লেগেছে।” ছয় মাস আগে মুন্নীর বিয়ে হয়েছিল; সংসারের অভাব ঘোচাতে তিনি গার্মেন্টসে যোগ দেন।
রাত সোয়া ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।