ঢাকা ০১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়া মেলে না বিদেশগামীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

কুমিল্লায় বিদেশগামীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে প্রতিদিন কুমিল্লা সুপার কার্যালয়ের ওয়ান স্টোপ সেন্টারের সামনে ভিড় জমান অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ প্রবাসগামী মানুষ। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। তবে এজন্য তাদের দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদফতরের সূত্র মতে, প্রতি বছর কুমিল্লা জেলা থেকে শ্রম ও অভিবাসনের জন্য আনুমানিক ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ মানুষ প্রবাসে পাড়ি জমায়। বৈধ কাজের জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই যেতে হলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়।


এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রথমে বিদেশগামী আগ্রহীরা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ৫০০ টাকার ব্যাংক চালানের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে। আবেদনটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভারে আসলে আগ্রহীর ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য নির্দিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আগ্রহী ওই ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে এবং দেশে কোন প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে কি না অথবা আগ্রহী ব্যক্তির নামে কোন প্রকার মামলা আছে কি না, সেটি যাচাই করে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সার্ভারের মাধ্যমে জমা দেয়।


বিদেশগামী আগ্রহী ব্যক্তিরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য থানার সামনে অবস্থানরত বিভিন্ন দোকানে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে থাকে। এই সময় আগ্রহীদের কাছ থেকে দোকানদার ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ওই দোকানদারের চুক্তি আছে এবং কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে দিবে- এইশর্তে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা নেয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মুরাদনগর ভাঙ্গরা বাজার থানার এক প্রবাসগামী সময় সংবাদকে বলেন, ভাঙ্গরা বাজার থানার সামনে অবস্থিত কম্পিউটার দোকানের হোসেইন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ টাকার চুক্তিতে আমি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে জমা দিয়েছি। আমাকে আর কোথাও যেতে হয়নি। নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমি আজকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়েছি।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিদেশগামী সময় সংবাদকে জানান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রাজাপাড়া এলাকার দালাল ইকবালের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ ১ হাজার ৮০০ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়েছি।

কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে আসা বিদেশগামী এক যুবক সময় সংবাদকে জানান, দাউদকান্দি থানার বিসমিল্লাহ লাইব্রেরির সাদ্দাম নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২ হাজার টাকার মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করেছি।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা লাগার কারণ হিসেবে কামাল নামে এক বিদেশগামী সময় সংবাদকে বলেন, থানার সামনে কম্পিউটার দোকানের লোকজনের মাধ্যমে চুক্তি করলে কোনো ঝামেলা হয় না। আর নিজে নিজে করতে গেলে এই অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য দালালের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে সবাই।

কুমিল্লার ১৮টি থানার বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিটি থানার সামনে একাধিক কম্পিউটার দোকান, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন দোকানে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা যায়। এসব দোকানদাররা সংশ্লিষ্ট থানার সাথে চুক্তি করে রাখে। তাদেরকে ১ হাজার ৫০০ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা দিলে আর কোনো যাচাই বাছাইয়ের দরকার হয় না। চুক্তি অনুযায়ী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসফিকুজ্জামান আকতার সময় সংবাদকে বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যাংক চালান ব্যাতিত কোনো টাকা লাগে না। যদি কেউ পুলিশের নাম দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে বা যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এমন অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৩০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
১৫ বার পড়া হয়েছে

কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়া মেলে না বিদেশগামীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

আপডেট সময় ০৪:৩০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

কুমিল্লায় বিদেশগামীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে প্রতিদিন কুমিল্লা সুপার কার্যালয়ের ওয়ান স্টোপ সেন্টারের সামনে ভিড় জমান অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ প্রবাসগামী মানুষ। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। তবে এজন্য তাদের দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদফতরের সূত্র মতে, প্রতি বছর কুমিল্লা জেলা থেকে শ্রম ও অভিবাসনের জন্য আনুমানিক ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ মানুষ প্রবাসে পাড়ি জমায়। বৈধ কাজের জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই যেতে হলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়।


এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রথমে বিদেশগামী আগ্রহীরা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ৫০০ টাকার ব্যাংক চালানের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে। আবেদনটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভারে আসলে আগ্রহীর ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য নির্দিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আগ্রহী ওই ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে এবং দেশে কোন প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে কি না অথবা আগ্রহী ব্যক্তির নামে কোন প্রকার মামলা আছে কি না, সেটি যাচাই করে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সার্ভারের মাধ্যমে জমা দেয়।


বিদেশগামী আগ্রহী ব্যক্তিরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য থানার সামনে অবস্থানরত বিভিন্ন দোকানে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে থাকে। এই সময় আগ্রহীদের কাছ থেকে দোকানদার ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ওই দোকানদারের চুক্তি আছে এবং কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে দিবে- এইশর্তে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা নেয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মুরাদনগর ভাঙ্গরা বাজার থানার এক প্রবাসগামী সময় সংবাদকে বলেন, ভাঙ্গরা বাজার থানার সামনে অবস্থিত কম্পিউটার দোকানের হোসেইন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ টাকার চুক্তিতে আমি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে জমা দিয়েছি। আমাকে আর কোথাও যেতে হয়নি। নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমি আজকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়েছি।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিদেশগামী সময় সংবাদকে জানান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রাজাপাড়া এলাকার দালাল ইকবালের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ ১ হাজার ৮০০ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়েছি।

কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে আসা বিদেশগামী এক যুবক সময় সংবাদকে জানান, দাউদকান্দি থানার বিসমিল্লাহ লাইব্রেরির সাদ্দাম নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২ হাজার টাকার মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করেছি।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা লাগার কারণ হিসেবে কামাল নামে এক বিদেশগামী সময় সংবাদকে বলেন, থানার সামনে কম্পিউটার দোকানের লোকজনের মাধ্যমে চুক্তি করলে কোনো ঝামেলা হয় না। আর নিজে নিজে করতে গেলে এই অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য দালালের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে সবাই।

কুমিল্লার ১৮টি থানার বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিটি থানার সামনে একাধিক কম্পিউটার দোকান, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন দোকানে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা যায়। এসব দোকানদাররা সংশ্লিষ্ট থানার সাথে চুক্তি করে রাখে। তাদেরকে ১ হাজার ৫০০ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা দিলে আর কোনো যাচাই বাছাইয়ের দরকার হয় না। চুক্তি অনুযায়ী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসফিকুজ্জামান আকতার সময় সংবাদকে বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যাংক চালান ব্যাতিত কোনো টাকা লাগে না। যদি কেউ পুলিশের নাম দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে বা যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এমন অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।