দেশে চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজদের কেবল চেহারার পরিবর্তন হয়েছে: চরমোনাই পীর
দেশে চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজদের কেবল চেহারার পরিবর্তন হয়েছে: চরমোনাই পীর।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজদের কেবল চেহারার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তির শেষ হয়নি।
জনগণের মাঝে শান্তি আনতে রাজপথ না ছাড়তে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে অশ্বিনী কুমার হলে বরিশাল নগর সম্মেলনে এসব কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম তার বক্তব্যে দেশের মানুষ ভালো নেই উল্লেখ করেন। সরকারকে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর সভাপতি প্রফেসর মো. লোকমান হাকীমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আবুল খায়েরের সঞ্চালনায় নগরীর টাউন হলে নগর সম্মেলন’২৫ অনুষ্ঠিত হয়।
নগর সম্মেলনে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বহু আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার আগে ও পরে তাদের অধিকার আদায় ও ইনসাফের জন্য বহু রক্ত দিয়েছে। কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কখনও পূরণ হয়নি। মুক্তির লক্ষ্যে ৪৭ এ রক্ত দিয়েছে। কিন্তু পেয়েছে পাকিদের শোষণ, ৭১ আবার রক্ত দিয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও সেই লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। এমনকি স্বাধীন এ দেশে জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে রক্ত দিতে হয়েছে বহুবার। যে যখন ক্ষমতায় গিয়েছে তখন সে লুটেরা, দখলবাজ, ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। জাতি এগুলো আর চায় না।’
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ‘২৪ এর অভ্যুত্থান প্রমাণ করে কোনো ফ্যাসিস্ট খুনির খবরদারি জাতি মেনে নেয় না। তারা চায় একটি সুন্দর বাংলাদেশ। এ জন্য দরকার একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। আর এর অন্যতম উপাদান হলো জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার গঠনের সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা হলো পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি)। এ পদ্ধতিতে সব জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনবে। বিশেষত একক দলীয় আধিপত্যবাদ এবং স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে পিআর পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। এটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।’
সমাবেশে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদকে পরোয়া করে না। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা হবে, কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মেনে নেয়া হবে না। জনগণ ভারতের জঘন্য কূটকৌশলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বাংলাদেশে আবরও যদি কেউ দিল্লীর দাদাদের মদতপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে, তবে জাতি তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে ইনশাআল্লাহ। ২৪ এর অভ্যুত্থান হাজারও ছাত্র জনতার ত্যাগের ফসল। বহু ছাত্রজনতা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৪ এর অভ্যুত্থানে রাজপথে থাকা একটি দল হিসেবে বলছি দেশের স্বার্থ ব্যতিরেখে ভবিষ্যতেও যদি কেউ ভিন্ন পথে চলে আমরা তার বিষ দাঁত উপড়ে ফেলব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ‘ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ বরিশাল মহানগর, সভাপতি মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহাবুব, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বরিশাল মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ নাসির আহমেদ কাওসার, মাওলানা মুহাম্মাদ জাকারিয়া হামিদী, মাওলানা মুহাম্মাদ লুৎফুর রহমান, প্রিন্সিপাল মো. ওমর ফারুক সভাপতি জাতীয় শিক্ষক ফোরাম বরিশাল মহানগর, অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ নাসির, সভাপতি ইসলামী আইনজীবী পরিষদ বরিশাল মহানগর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম গোমস্তা, সভাপতি, ইসলামি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বরিশাল মহানগর, মুফতি মুহিবুল্লাহ কাজেমী, সভাপতি, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ, বরিশাল মহানগর, সভাপতি মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামি যুব আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর, গাজী মুহাম্মাদ রেদোয়ান, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর।
সম্মেলন শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি হিসেবে প্রফেসর মো. লোকমান হাকীম, সহ-সভাপতি হিসেবে মাওলানা নাছির আহমাদ কাওছার, সহ-সভাপতি মাওলানা জাকারিয়া হামিদী এবং সেক্রেটারী হিসেবে মাওলানা আবুল খায়ের নাম মঞ্চে ঘোষণা করা হয়।