ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো ছায়া

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

 দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি তদন্তে এমন তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে যা বিচার বিভাগে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতির ভয়াবহতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অর্ধশতাধিক বিচার বিভাগের কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন এবং তাদের অনেকের দেশের পাশাপাশি বিদেশে বিলাসবহুল সম্পত্তিও রয়েছে।

 

বিচার বিভাগে দুর্নীতির এই ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে দুদকের গোপন অনুসন্ধান, যা জানাচ্ছে যে ৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অনেকেই মন্ত্রীদের সান্নিধ্যে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এমনকি কানাডার বেগমপাড়ায় তাদের নামে অত্যাধুনিক বাড়ি ও বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, শিগগির তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে। এই অনুসন্ধানে ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণের কারণেই এই খাতে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা দলীয় আনুগত্যের কারণে নির্ভার ছিলেন। তারাই বিচার বিভাগকে মহা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত এক দশকে বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর আনিসুল হক আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে ধীরে ধীরে কলুষিত হতে থাকে বিচার বিভাগ। ওইসব কর্মকর্তা মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের ধারাবাহিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সেবা খাতগুলোরে মধ্যে অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে বিচার বিভাগ। বিগত দিনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে দুর্নীতিপরায়ণদের আনুগত্য সৃষ্টি করা হয়েছে; অনিয়ম-দুর্নীতির সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর উপযুক্ত ব্যক্তিকেই বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে পাওয়া গেছে। তাতে বলা যায়, বিচার বিভাগে রাতারাতি পরিবর্তন না হলেও সামনের দিনে ভালো একটি পরিবেশ ফিরে আসবে। এ খাতের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচার বিভাগের যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইন ও বিধি অনুযায়ী দুদক অনুসন্ধান করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। অভিযুক্তরা কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত হতে পারেন।

দুদকের অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাদের অন্যতম সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ার। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ কমিটিকে বাধ্য করে ঘুষের বিনিময়ে নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার ৪০০ থেকে ৫০০ লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও পরীক্ষার খাতা পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার কখনও একজনের পরীক্ষা দিতে অন্যজনকে ব্যবহার করা হয়েছে। দুদকের মামলায় জামিন ও খালাস বাণিজ্যের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

দুদকের গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব (বর্তমানে  ওএসডি) বিকাশ কুমার সাহা এক সময়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে বদলি, জামিন, খালাস বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ছেলেকে স্থায়ীভাবে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সিংহভাগ অর্থ পাচার করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ঢাকার গুলশানে ১৭০০ বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট আছে তাঁর। বিকাশ কুমারের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কুষ্টিয়ার নারী শিশু আদালতের বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব শতকোটি টাকা পাচার করে লন্ডনের ওয়াটফোর্ডে আলিশান বাংলোর মালিক হয়েছেন। তাঁর ছেলে ও মেয়ে ওই বাংলোতে বসবাস করেন। এর আগে দীর্ঘদিন নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মাহবুব।

কিশোরগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুবুর রহমান সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি আছে তাঁর। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে ঢাকার গুলশান ও মোহাম্মদপুরে দুটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন।

তবে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য হওয়ার কথা নয়। জুডিশিয়াল অফিসার হিসেবে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি হিসাবের বাইরে আমার কোনো কিছু (সম্পদ) নেই। এক সময় নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছি। এই কমিশনে বিচারিক কার্যক্রম দেখেছি। সেখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।

সিলেটের জেলা জজ মনির কামাল ঢাকার বনশ্রীতেই তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। এ ছাড়া স্ত্রী, ছেলে, শ্বশুর-শাশুড়ির নামে পূর্বাচলে প্লট, গুলশানে ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে তাঁর। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা। এর আগে ঢাকায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থাভাজন অ্যাডভোকেট বাহারের সাথে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা।

মাগুরার অতিরিক্ত জেলা জজ মুশফিকুর ইসলাম নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্ত্রীর নামে ৮ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেছেন। আয়কর নথিতে ২৫০ ভরি স্বর্ণালংকারের তথ্য উল্লেখ করেছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের বিচারক ছিলেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাইসারুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্যে প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর আদালতে কর্মরত ছিলেন। দুদক জানতে পেরেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় অত্যাধুনিক বাড়ির মালিক হয়েছেন। নিজ এলাকা সাতক্ষীরায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাঁর ও তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকার শান্তিনগর, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ ও নড়াইলে  স্ত্রী, বাবা, মা ও ভাইয়ের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। স্ত্রীকে আইন পেশায় যুক্ত রেখে মোটা অঙ্কের কালো টাকা সাদা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা।

ময়মনসিংহের বিশেষ জজ ফারহানা ফেরদৌস তদবির ও বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে পদোন্নতি নিয়েছেন। বিনিময়ে নিজে ঘুষ খেয়ে নামে-বেনামে কিনেছেন শত শত বিঘা জমি। ঢাকা ও আরও কয়েক স্থানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। ঢাকায়  কিনেছেন একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল দামি গাড়ি। ব্যাংকে রয়েছে শতকোটি টাকা। বিদেশে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কর্মরত ছিলেন।

শেরপুর জেলার  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ কামরুন নাহার রুমির স্বামী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন। স্বামীর পরিচয়ে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে রয়েছে ৫০ কোটি টাকার অধিক। ঢাকায় তাঁর রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নিজ এলাকায় কিনেছেন শত বিঘা জমি। বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে কর্মরত ছিলেন।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ শওকত হোসেন মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতাদের হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড়। স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি ও নিকটাত্মীয়ের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে রেখেছেন শতকোটি টাকা।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মহেশখালীতে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদ, শেয়ার ও নগদ অর্থের মালিক। ঢাকায় চাকরিকালে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সান্নিধ্যে থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় তাঁর রয়েছে অত্যাধুনিক বাড়ি। নিজ এলাকায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি।

হবিগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সম্পদ ও প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতির টাকায় নিজ এলাকা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় গড়ে তুলেছেন সম্পদ। ব্যাংকে বেনামে এফডিআর করে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা।

ঢাকা মহানগর আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ তসরুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ঢাকার শান্তিনগরসহ অন্যান্য স্থানে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় অত্যাধুনিক বাড়ি বানিয়েছেন।  নিজ এলাকায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি।

টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা শাহরিয়ার খান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি। ব্যাংকে রয়েছে শতকোটি টাকা। বিদেশে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। এর আগে তিনি ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরে।

এ ছাড়া বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মশিউর রহমান খান, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরী, রংপুরের জেলা জজ ফজলে খোদা মোহাম্মাদ নাজির, রাঙামাটির জেলা জজ শহীদুল ইসলাম, জামালপুরের জেলা জজ আহসানুল হক, ঢাকার বিশেষ জজ মাসুদ পারভেজ, সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ দিদার হোসাইন, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা জজ তওহিদুল হক, রাজবাড়ীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শাহিনূর রহমান, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরী, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা খুরশীদ আলম, আতিকুল ইসলাম, সুরুজ সরকার, আলী মনসুর, নোমান মইন উদ্দিন, সুব্রত মল্লিক, রকিবুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, তেহসিন ইফতেখার, ঢাকার যুগ্ম জজ জিএম নাজমুন শাহাদত, রংপুরের সিনিয়র সহকারী জজ কৃষ্ণ কমল রায়, ডা. এবিএম মাহমুদুল হক, রুস্তম আলী, মামুনুর রশীদ, জুয়েল রানা, সাইফুর রহমান সিদ্দিকী, আব্বাস উদ্দিন, জিন্নাৎ জাহান ঝুনু, এনামুল হক বসুনিয়া, আ. ন. ম. ইলিয়াস, মোক্তাগীর আলম, মিল্টন হোসেন ও কনক বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দুনীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচার বিভাগের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তপশিলভুক্ত কোনো অভিযোগ জমা হলে দুদক সেটা অনুসন্ধান করতে পারে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে কোনো বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে দুদককে সতর্কতার সাথে আগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দুদক জামিন, খালাস বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারবে না। কোনো জামিন, খালাস নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। কারণ একজন বিচারক আইন অনুযায়ী আসামিকে জামিন ও খালাস দিতে পারেন। তবে তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে তা অনুসন্ধান করতে পারবে দুদক।

সূত্র: সমকাল

নিউজনাউ/২০২৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
২৪ বার পড়া হয়েছে

বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো ছায়া

আপডেট সময় ০৯:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

 দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি তদন্তে এমন তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে যা বিচার বিভাগে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতির ভয়াবহতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অর্ধশতাধিক বিচার বিভাগের কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন এবং তাদের অনেকের দেশের পাশাপাশি বিদেশে বিলাসবহুল সম্পত্তিও রয়েছে।

 

বিচার বিভাগে দুর্নীতির এই ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে দুদকের গোপন অনুসন্ধান, যা জানাচ্ছে যে ৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অনেকেই মন্ত্রীদের সান্নিধ্যে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এমনকি কানাডার বেগমপাড়ায় তাদের নামে অত্যাধুনিক বাড়ি ও বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, শিগগির তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে। এই অনুসন্ধানে ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণের কারণেই এই খাতে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা দলীয় আনুগত্যের কারণে নির্ভার ছিলেন। তারাই বিচার বিভাগকে মহা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত এক দশকে বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর আনিসুল হক আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে ধীরে ধীরে কলুষিত হতে থাকে বিচার বিভাগ। ওইসব কর্মকর্তা মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের ধারাবাহিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সেবা খাতগুলোরে মধ্যে অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে বিচার বিভাগ। বিগত দিনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে দুর্নীতিপরায়ণদের আনুগত্য সৃষ্টি করা হয়েছে; অনিয়ম-দুর্নীতির সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর উপযুক্ত ব্যক্তিকেই বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে পাওয়া গেছে। তাতে বলা যায়, বিচার বিভাগে রাতারাতি পরিবর্তন না হলেও সামনের দিনে ভালো একটি পরিবেশ ফিরে আসবে। এ খাতের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচার বিভাগের যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইন ও বিধি অনুযায়ী দুদক অনুসন্ধান করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। অভিযুক্তরা কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত হতে পারেন।

দুদকের অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাদের অন্যতম সাবেক আইন সচিব গোলাম সরোয়ার। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ কমিটিকে বাধ্য করে ঘুষের বিনিময়ে নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার ৪০০ থেকে ৫০০ লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও পরীক্ষার খাতা পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার কখনও একজনের পরীক্ষা দিতে অন্যজনকে ব্যবহার করা হয়েছে। দুদকের মামলায় জামিন ও খালাস বাণিজ্যের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

দুদকের গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব (বর্তমানে  ওএসডি) বিকাশ কুমার সাহা এক সময়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে বদলি, জামিন, খালাস বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ছেলেকে স্থায়ীভাবে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সিংহভাগ অর্থ পাচার করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ঢাকার গুলশানে ১৭০০ বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট আছে তাঁর। বিকাশ কুমারের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কুষ্টিয়ার নারী শিশু আদালতের বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব শতকোটি টাকা পাচার করে লন্ডনের ওয়াটফোর্ডে আলিশান বাংলোর মালিক হয়েছেন। তাঁর ছেলে ও মেয়ে ওই বাংলোতে বসবাস করেন। এর আগে দীর্ঘদিন নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মাহবুব।

কিশোরগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুবুর রহমান সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি আছে তাঁর। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে ঢাকার গুলশান ও মোহাম্মদপুরে দুটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন।

তবে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য হওয়ার কথা নয়। জুডিশিয়াল অফিসার হিসেবে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি হিসাবের বাইরে আমার কোনো কিছু (সম্পদ) নেই। এক সময় নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছি। এই কমিশনে বিচারিক কার্যক্রম দেখেছি। সেখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।

সিলেটের জেলা জজ মনির কামাল ঢাকার বনশ্রীতেই তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। এ ছাড়া স্ত্রী, ছেলে, শ্বশুর-শাশুড়ির নামে পূর্বাচলে প্লট, গুলশানে ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে তাঁর। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা। এর আগে ঢাকায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থাভাজন অ্যাডভোকেট বাহারের সাথে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা।

মাগুরার অতিরিক্ত জেলা জজ মুশফিকুর ইসলাম নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্ত্রীর নামে ৮ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেছেন। আয়কর নথিতে ২৫০ ভরি স্বর্ণালংকারের তথ্য উল্লেখ করেছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের বিচারক ছিলেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাইসারুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্যে প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর আদালতে কর্মরত ছিলেন। দুদক জানতে পেরেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় অত্যাধুনিক বাড়ির মালিক হয়েছেন। নিজ এলাকা সাতক্ষীরায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাঁর ও তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকার শান্তিনগর, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ ও নড়াইলে  স্ত্রী, বাবা, মা ও ভাইয়ের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। স্ত্রীকে আইন পেশায় যুক্ত রেখে মোটা অঙ্কের কালো টাকা সাদা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা।

ময়মনসিংহের বিশেষ জজ ফারহানা ফেরদৌস তদবির ও বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে পদোন্নতি নিয়েছেন। বিনিময়ে নিজে ঘুষ খেয়ে নামে-বেনামে কিনেছেন শত শত বিঘা জমি। ঢাকা ও আরও কয়েক স্থানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। ঢাকায়  কিনেছেন একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল দামি গাড়ি। ব্যাংকে রয়েছে শতকোটি টাকা। বিদেশে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কর্মরত ছিলেন।

শেরপুর জেলার  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ কামরুন নাহার রুমির স্বামী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন। স্বামীর পরিচয়ে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে রয়েছে ৫০ কোটি টাকার অধিক। ঢাকায় তাঁর রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নিজ এলাকায় কিনেছেন শত বিঘা জমি। বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে কর্মরত ছিলেন।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ শওকত হোসেন মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতাদের হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড়। স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি ও নিকটাত্মীয়ের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে রেখেছেন শতকোটি টাকা।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মহেশখালীতে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদ, শেয়ার ও নগদ অর্থের মালিক। ঢাকায় চাকরিকালে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সান্নিধ্যে থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় তাঁর রয়েছে অত্যাধুনিক বাড়ি। নিজ এলাকায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি।

হবিগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সম্পদ ও প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতির টাকায় নিজ এলাকা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় গড়ে তুলেছেন সম্পদ। ব্যাংকে বেনামে এফডিআর করে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা।

ঢাকা মহানগর আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ তসরুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ঢাকার শান্তিনগরসহ অন্যান্য স্থানে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় অত্যাধুনিক বাড়ি বানিয়েছেন।  নিজ এলাকায় কিনেছেন শত শত বিঘা জমি।

টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা শাহরিয়ার খান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি। ব্যাংকে রয়েছে শতকোটি টাকা। বিদেশে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। এর আগে তিনি ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরে।

এ ছাড়া বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মশিউর রহমান খান, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরী, রংপুরের জেলা জজ ফজলে খোদা মোহাম্মাদ নাজির, রাঙামাটির জেলা জজ শহীদুল ইসলাম, জামালপুরের জেলা জজ আহসানুল হক, ঢাকার বিশেষ জজ মাসুদ পারভেজ, সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ দিদার হোসাইন, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা জজ তওহিদুল হক, রাজবাড়ীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শাহিনূর রহমান, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরী, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা খুরশীদ আলম, আতিকুল ইসলাম, সুরুজ সরকার, আলী মনসুর, নোমান মইন উদ্দিন, সুব্রত মল্লিক, রকিবুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, তেহসিন ইফতেখার, ঢাকার যুগ্ম জজ জিএম নাজমুন শাহাদত, রংপুরের সিনিয়র সহকারী জজ কৃষ্ণ কমল রায়, ডা. এবিএম মাহমুদুল হক, রুস্তম আলী, মামুনুর রশীদ, জুয়েল রানা, সাইফুর রহমান সিদ্দিকী, আব্বাস উদ্দিন, জিন্নাৎ জাহান ঝুনু, এনামুল হক বসুনিয়া, আ. ন. ম. ইলিয়াস, মোক্তাগীর আলম, মিল্টন হোসেন ও কনক বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দুনীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচার বিভাগের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তপশিলভুক্ত কোনো অভিযোগ জমা হলে দুদক সেটা অনুসন্ধান করতে পারে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে কোনো বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে দুদককে সতর্কতার সাথে আগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দুদক জামিন, খালাস বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারবে না। কোনো জামিন, খালাস নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। কারণ একজন বিচারক আইন অনুযায়ী আসামিকে জামিন ও খালাস দিতে পারেন। তবে তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে তা অনুসন্ধান করতে পারবে দুদক।

সূত্র: সমকাল

নিউজনাউ/২০২৪