ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
Logo টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতীয় দল প্রকাশ, জায়গা হয়নি শুভমান গিলের, ফিরেছেন ঈশান কিষাণ Logo শহীদ হাদির স্মরণে জার্সি উৎসর্গ করবে রাজশাহী Logo ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: আপিল সংক্রান্ত সময়সূচিতে পরিবর্তন আনল ইসি Logo দুর্নীতির দ্বিতীয় মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৭ বছরের সাজা Logo জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শরীফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহে যুবক হত্যাকাণ্ড ও মরদেহে আগুন দেয়ার চেষ্টা: র‍্যাবের হাতে ৭ জন Logo শহিদ ওসমান হাদির জানাজায় মানুষের ঢল, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনসমুদ্র Logo মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানুষের স্রোত, পূর্ণ জনসমাবেশ Logo মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পৌঁছেছে হাদির Logo ঢাকায় ১৫ দিনের সফর শেষে লন্ডনে ফিরলেন ডা. জুবাইদা রহমান

ভূমিকম্প কি আল্লাহর গজব? ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ

নিজস্ব সংবাদ :

সংগৃহিত

মানুষ যত উন্নত প্রযুক্তি ও জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাক না কেন, ভূমিকম্প আমাদের বুঝিয়ে দেয়—মানবশক্তি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার সামনে কত ক্ষুদ্র। মুহূর্তের কম্পনে মানুষ তার সব অহংকার ভুলে যায়, আর মনে প্রশ্ন জাগে—এটি কি আল্লাহর গজব? ইসলাম এ বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেয়?

ইসলামী শিক্ষায় ভূমিকম্পকে কেবল শাস্তি হিসেবে নয়, বরং সতর্কবার্তা, পরীক্ষা এবং আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন—

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, প্রাণহানি ও ফলফসল হ্রাসের মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
(সুরা বাকারা ১৫৫)

ভূমিকম্প সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

১️⃣ ভূমিকম্প—কখনো শাস্তি

অতীতে কিছু জাতি তাদের পাপাচারের কারণে ধ্বংস হয়। তাদের মধ্যে সামূদ জাতির কথা কুরআনে এসেছে—

“অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে গ্রাস করল, আর তারা নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।”
(সুরা আল-আরাফ ৭৮)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জাতির জন্য ভূমিকম্প আল্লাহর শাস্তি ছিল।

২️⃣ আল্লাহর নিদর্শন ও সতর্কবার্তা

আল্লাহ কখনো মানুষের দৃষ্টি আল্লাহর দিকে ফেরানোর জন্যও বিপর্যয় পাঠান। কুরআনে বলা হয়েছে—

“আমি নিদর্শনসমূহ পাঠাই মানুষকে সতর্ক করার জন্য।”
(সুরা আল-ইসরা ৫৯)

৩️⃣ আল্লাহর শক্তির প্রকাশ

পৃথিবী স্থির থাকে আল্লাহর আদেশে। কম্পনের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা ও কুদরত প্রকাশ পায়।

“আল্লাহ সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।”
(সুরা বাকারা ২০)

৪️⃣ কিয়ামতের পূর্বাভাস

কিয়ামতের সময় ভূমিকম্প ভয়াবহ আকারে হবে। কুরআনে এসেছে—

“নিশ্চয় কিয়ামতের ভূকম্পন একটি ভীতিকর ঘটনা…”
(সুরা হজ ১–২)

সুরা ‘যিলজাল’-এও কিয়ামতের ভূমিকম্পের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

হাদিসে ভূমিকম্প

১️⃣ কিয়ামতের আলামত হিসেবে ভূমিকম্প

রাসুল (সা.) বলেন—

“জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে…”
(বুখারি ১০৩৬)

২️⃣ ভূমিকম্প হলে কী করা উচিত

হাদিসে এসেছে—

“এসব ঘটনার সময় আল্লাহর জিকির, দোয়া ও ইস্তিগফারে মনোযোগ দাও।”
(তাবারানি)

৩️⃣ পাপাচার বাড়লে বিপদ নেমে আসে

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) মানবসমাজে নির্দিষ্ট অনাচার ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
(তিরমিজি ২২১০)

ইসলামে ভূমিকম্পের মূল কারণ

১. আল্লাহর পরীক্ষা — ধৈর্য ও ঈমান যাচাই।
২. সতর্কবার্তা — মানুষকে আত্মসমালোচনায় ফেরানো।
৩. শাস্তি — অতীতের কিছু জাতির মতো; তবে সব ভূমিকম্প শাস্তি নয়।
৪. কুদরতের প্রকাশ — আল্লাহর মহাপরাক্রম মানুষ যেন উপলব্ধি করে।

ভূমিকম্পের সময় ও পরে মুসলমানের করণীয়

✔ তওবা করা
✔ বেশি ইস্তিগফার পড়া
✔ দোয়া করা
✔ সাদকাহ বাড়ানো
✔ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে গুরুত্ব দেওয়া
✔ বিপর্যস্ত মানুষকে সাহায্য করা
✔ আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করা

ভূমিকম্পসহ প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। কখনো তা পরীক্ষা, কখনো সতর্কবার্তা—আর কখনো শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু কোন বিপদ কোন উদ্দেশ্যে এসেছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। প্রতিটি কম্পন আমাদের হৃদয়কে নরম করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:১২:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
৫৭ বার পড়া হয়েছে

ভূমিকম্প কি আল্লাহর গজব? ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ

আপডেট সময় ০৭:১২:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

মানুষ যত উন্নত প্রযুক্তি ও জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাক না কেন, ভূমিকম্প আমাদের বুঝিয়ে দেয়—মানবশক্তি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার সামনে কত ক্ষুদ্র। মুহূর্তের কম্পনে মানুষ তার সব অহংকার ভুলে যায়, আর মনে প্রশ্ন জাগে—এটি কি আল্লাহর গজব? ইসলাম এ বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেয়?

ইসলামী শিক্ষায় ভূমিকম্পকে কেবল শাস্তি হিসেবে নয়, বরং সতর্কবার্তা, পরীক্ষা এবং আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন—

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, প্রাণহানি ও ফলফসল হ্রাসের মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
(সুরা বাকারা ১৫৫)

ভূমিকম্প সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

১️⃣ ভূমিকম্প—কখনো শাস্তি

অতীতে কিছু জাতি তাদের পাপাচারের কারণে ধ্বংস হয়। তাদের মধ্যে সামূদ জাতির কথা কুরআনে এসেছে—

“অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে গ্রাস করল, আর তারা নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।”
(সুরা আল-আরাফ ৭৮)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জাতির জন্য ভূমিকম্প আল্লাহর শাস্তি ছিল।

২️⃣ আল্লাহর নিদর্শন ও সতর্কবার্তা

আল্লাহ কখনো মানুষের দৃষ্টি আল্লাহর দিকে ফেরানোর জন্যও বিপর্যয় পাঠান। কুরআনে বলা হয়েছে—

“আমি নিদর্শনসমূহ পাঠাই মানুষকে সতর্ক করার জন্য।”
(সুরা আল-ইসরা ৫৯)

৩️⃣ আল্লাহর শক্তির প্রকাশ

পৃথিবী স্থির থাকে আল্লাহর আদেশে। কম্পনের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা ও কুদরত প্রকাশ পায়।

“আল্লাহ সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।”
(সুরা বাকারা ২০)

৪️⃣ কিয়ামতের পূর্বাভাস

কিয়ামতের সময় ভূমিকম্প ভয়াবহ আকারে হবে। কুরআনে এসেছে—

“নিশ্চয় কিয়ামতের ভূকম্পন একটি ভীতিকর ঘটনা…”
(সুরা হজ ১–২)

সুরা ‘যিলজাল’-এও কিয়ামতের ভূমিকম্পের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

হাদিসে ভূমিকম্প

১️⃣ কিয়ামতের আলামত হিসেবে ভূমিকম্প

রাসুল (সা.) বলেন—

“জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে…”
(বুখারি ১০৩৬)

২️⃣ ভূমিকম্প হলে কী করা উচিত

হাদিসে এসেছে—

“এসব ঘটনার সময় আল্লাহর জিকির, দোয়া ও ইস্তিগফারে মনোযোগ দাও।”
(তাবারানি)

৩️⃣ পাপাচার বাড়লে বিপদ নেমে আসে

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) মানবসমাজে নির্দিষ্ট অনাচার ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
(তিরমিজি ২২১০)

ইসলামে ভূমিকম্পের মূল কারণ

১. আল্লাহর পরীক্ষা — ধৈর্য ও ঈমান যাচাই।
২. সতর্কবার্তা — মানুষকে আত্মসমালোচনায় ফেরানো।
৩. শাস্তি — অতীতের কিছু জাতির মতো; তবে সব ভূমিকম্প শাস্তি নয়।
৪. কুদরতের প্রকাশ — আল্লাহর মহাপরাক্রম মানুষ যেন উপলব্ধি করে।

ভূমিকম্পের সময় ও পরে মুসলমানের করণীয়

✔ তওবা করা
✔ বেশি ইস্তিগফার পড়া
✔ দোয়া করা
✔ সাদকাহ বাড়ানো
✔ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে গুরুত্ব দেওয়া
✔ বিপর্যস্ত মানুষকে সাহায্য করা
✔ আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করা

ভূমিকম্পসহ প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। কখনো তা পরীক্ষা, কখনো সতর্কবার্তা—আর কখনো শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু কোন বিপদ কোন উদ্দেশ্যে এসেছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। প্রতিটি কম্পন আমাদের হৃদয়কে নরম করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানায়।