শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে?
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গঠিত ট্রাইব্যুনালের এটি হবে প্রথম রায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। রায়কেন্দ্রিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের মতো চোরাগোপ্তা নাশকতার ঘটনা বাড়তে থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য—পরিস্থিতি সামনে আরও অস্থিতিশীল হতে পারে, এবং দলটির পক্ষ থেকে নাশকতা বাড়ানোর পাশাপাশি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, আসন্ন দিনগুলোতে একই ধরনের কর্মসূচি দেখা যেতে পারে। তার মতে, আগুন ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড যেন দেশের রাজনীতির স্থায়ী চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে অর্থ ও অস্ত্র উভয়ই রয়েছে, এবং প্রায় আট হাজার নেতাকর্মীর কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকার তথ্য নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার মতে, এসব অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালেও দলটির সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা গিয়েছিল; বর্তমান পরিস্থিতি সেই ধারা থেকেই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তারা মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের দায়িত্ব।
ড. সিদ্দিকুর রহমান খান আরও বলেন, অতীতে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তাদের আরও শঙ্কিত করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব অপতৎপরতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার মামলার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে থাকা আরও কয়েকটি মামলার রায় পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সময় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়াতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
আলতাফ পারভেজ বলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে, আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বাড়তে পারে—এমন পরিস্থিতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং দলের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে ছাত্রলীগসহ দলটির অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও স্থগিত থাকে।
























