গণভোট হলে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে: নির্বাচন কমিশন
জুলাই সনদের আলোকে গণভোট আয়োজন করতে হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিদ্যমান পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় ও প্রস্তুতি সভায়’ এই তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন।
সভার শুরুতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কমিশন ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তিন ধাপে বিভক্ত— তফসিল ঘোষণার আগে, ঘোষণার পর থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত, এবং নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে। প্রতিটি ধাপেই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাহিনীগুলোর সুপারিশ ও মতামত কমিশনের পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে।
সভায় মোট ২২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান সিদ্ধান্তগুলো হলো—
- জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাপ্ত প্রস্তাব, মতামত ও সুপারিশগুলো লিখিতভাবে কমিশনে জমা দিতে হবে।
- নিরাপত্তা পরিকল্পনা সময়মতো প্রেরণ করতে হবে, যাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীগুলো প্রস্তুতি নিতে পারে।
- হুমকি মূল্যায়ন (থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট) করে ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে; রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট হলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আনতে হবে— এজন্য সংশ্লিষ্টদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- গোয়েন্দা তথ্যসহ নির্বাচনসংক্রান্ত সব তথ্য নিয়মিতভাবে কমিশনে পাঠাতে হবে এবং প্রয়োজনে বাহিনীগুলোর মধ্যেও তথ্য বিনিময় করা যাবে।
- নির্বাচনের আগে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা দিলে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
- যেকোনো অপতৎপরতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এখন থেকেই সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করতে হবে।
- অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঘটলে নিকটস্থ বাহিনী প্রথমে সাড়া দেবে।
- প্রযুক্তি, সক্ষমতা উন্নয়ন, কন্টিনজেন্সি ম্যানেজমেন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
- নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং ও সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
- ভয়েস ক্লোন বা চরিত্র হননের মতো ঘটনার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি থাকতে হবে।
- ভুয়া তথ্যের বদলে সঠিক তথ্য দ্রুত প্রচারে গুরুত্ব দিতে হবে।
- অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী চিহ্নিতকরণ, র্যান্ডম চেক, বর্ডার ও সি-রুট নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
- নাশকতার সম্ভাবনা রোধে সব বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে।
- তফসিল ঘোষণার পর বিদেশি নাগরিকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রবাসী ভোট (OCV) ও ডাকযোগে ভোটের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে; সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে।
- যারা দীর্ঘদিন একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন, নির্বাচনের আগে তাদের বদলির ব্যবস্থা করা হবে।
- ঝুঁকিপূর্ণ, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র শ্রেণিবিন্যাস করে তালিকা কমিশনে দাখিল করতে হবে।
- আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় বজায় রাখতে হবে।



















