ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধম্যের বাংলাদেশ বিরোধিতার সুর যেন এক অন্য পরতে উঠে গেছে। প্রতিবেদনের ভাষা, উপস্থাপনা এবং তথ্যের উৎস স্পষ্ট না থাকার দিকগুলো একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় কতটা অপেশাদারভাবে তৈরি এসব প্রতিবেদন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলাচিঠি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার মতো নানা ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, আর সেগুলোই জায়গা করে নিচ্ছে ভারতের নানা খবরের কাগজ আর টেলিভশনগুলোতে।
এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে। এ তালিকায় রিপাবলিক বাংলার জায়গাটা শীর্ষে। যদিও এ তালিকা ভারতীয় গণমাধ্যমের অপতথ্য প্রচারের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে না উল্লেখ করে রিউমর স্ক্যানার বলেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভায়াবহতা আরও অনেক বেশি।
রিউমর স্ক্যানারের হেড অব অপারেন্স সাজ্জাদ হোসেন সময় সংবাদকে বলেন,
প্রতিবেদনে সার্বিক চিত্র উঠে আসেনি। এর মানে হলো, এর ভয়াবহতা আরও বেশি। মিডিয়া লিটারেসির বিষয়গুলো আমাদের মানুষদেরকে ভালোভাবে জানানো হলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
সংবাদমাধ্যমে যাচাই–বাছাই করে তথ্য প্রকাশের কথা থাকলেও ভারতের অনেক মূলধারার গণমাধ্যম বাংলাদেশ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পর্যায়ে নামিয়ে আনছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে শুধু কূটনৈতিক নয়, অন্যান্য পর্যায়েও যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এতদিন একটা দল বা ওই দলের সমর্থকদের সঙ্গে একতরফা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। এখন কূটনীতির সরকারি কাঠামোগুলো ব্যবহার করা দরকার। আবার সরকারের বাইরের কাঠামোগুলোও ব্যবহার করা দরকার। তাহলে হয়ত আমরা যে ভারসাম্য কাঠামোটা চাচ্ছি, সেটা বুঝাতে পারবো।
নানা অপপ্রচার ঠেকাতে দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য এবং দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা বাড়ানোর পরামর্শ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপকের।