৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে কী বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি?
৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে কী বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি?
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি স্বীকার করেছিলেন যে, শেখ হাসিনা তার কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি সেটি গ্রহণ করেছেন। সেদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি আসলে কী বলেছিলেন?
গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর সেই দিনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনে ওই বৈঠকের পর জানানো হয়, কিছুক্ষণের মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আজ বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে আলোচনা হয়।
সভায় জরুরিভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় বৈঠকে সর্বসম্মতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থানকে স্বাভাবিক করতে ও লুটপাট কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদকে রক্ষা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করছি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
দেশের অর্থনীতি, কলকারখানা ও প্রশাসন চালু রাখার লক্ষ্যে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া যারা হত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অনতিবিলম্বে বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে। দেশের সকল অফিস আদালত আগামীকাল (৬ আগস্ট) থেকেই স্বাভাবিকভাবে চলবে।
আসুন আমরা দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করি। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য আমি বিনয়ের সাথে আপনাদের প্রতি অনুরোধ করছি। একটি সুন্দর ও সোনালি ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে সম্প্রতি যা বলেছেন রাষ্ট্রপতি
সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকায় সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার নেন। গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় মতিউর রহমান উল্লেখ করেন, তিন সপ্তাহ ধরে তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সেখানেও তিনি খোঁজ নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হন।
সেখানে আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে জানতে চান, আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি (শেখ হাসিনা) আসছেন না’।
আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন।… সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি’।
দেশ ছাড়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভারত সরকার তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে; যা দিয়ে তিনি অন্য দেশে যেতে পারবেন।