ঢাকা ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড রংপুরে তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি দল

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড রংপুরে তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি দল।

পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগই বদলে দেয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গতিপথ। আরও বেগবান হয় আন্দোলন। সেই পথ ধরে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। তবে দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি নেই আবু সাঈদ হত্যা মামলার। সবশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেয় আবু সাইদের পরিবার।

অভিযোগ দায়েরের এক সপ্তাহ পর সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল।


মামলার তদন্তের কাজে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করে দলটি। ঘটনার স্কেচ ম্যাপ তৈরিসহ ভিসির কনফারেন্স রুম থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মূল ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি কথা বলেন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও।


প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এস এম মঈনুল করিম। তিনি বলেন, ‘বেরোবি শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদসহ বৃহত্তর রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। শহীদ আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনাটি সারা দেশ, এমনকি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সে জন্য এই হত্যাকাণ্ডকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে যেখানে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, ঘটনার সময় চাক্ষুষ সাক্ষী যারা ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেয়াসহ সার্বিক কার্যক্রম করা হচ্ছে।’

মঈনুল করিম বলেন, ‘চিফ প্রসিকিউটরের নির্দেশে আমরা নয় জন তদন্তকারী ও তিনজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিলে ১২ জন এসে তদন্ত করছি। গুরুত্বের সঙ্গে আবু সাঈদের হত্যার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত হওয়ার পরেই হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করবো।’
 

তিনি জানান, এর আগে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে মামলা হয়েছে। সেটা হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেও মামলা করতে কোনও বিধি নিষেধ নেই। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতা পেলেই অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

তদন্ত দল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলীসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যদের সঙ্গে দিনভর কথা বলে জবানবন্দি গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।

পরিবারের সদস্য ও বেরোবির উপাচার্য জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা প্রত্যাশা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের।

শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘১৬ জুলাই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আমার ভাইকে। এরপর প্রহসনমূলক একটি মামলাও করে পুলিশ। সরকার পতনের পর আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করলেও সে মামলার কোন অগ্রগতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করি সঠিক বিচার পাব।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে পিবিআই তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের রিপোর্ট দেয় নি। এখনও মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত শেষে সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যাবে।’
 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
২ বার পড়া হয়েছে

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড রংপুরে তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি দল

আপডেট সময় ১০:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড রংপুরে তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি দল।

পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগই বদলে দেয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গতিপথ। আরও বেগবান হয় আন্দোলন। সেই পথ ধরে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। তবে দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি নেই আবু সাঈদ হত্যা মামলার। সবশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেয় আবু সাইদের পরিবার।

অভিযোগ দায়েরের এক সপ্তাহ পর সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল।


মামলার তদন্তের কাজে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করে দলটি। ঘটনার স্কেচ ম্যাপ তৈরিসহ ভিসির কনফারেন্স রুম থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মূল ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি কথা বলেন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও।


প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এস এম মঈনুল করিম। তিনি বলেন, ‘বেরোবি শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদসহ বৃহত্তর রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। শহীদ আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনাটি সারা দেশ, এমনকি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সে জন্য এই হত্যাকাণ্ডকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে যেখানে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, ঘটনার সময় চাক্ষুষ সাক্ষী যারা ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেয়াসহ সার্বিক কার্যক্রম করা হচ্ছে।’

মঈনুল করিম বলেন, ‘চিফ প্রসিকিউটরের নির্দেশে আমরা নয় জন তদন্তকারী ও তিনজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিলে ১২ জন এসে তদন্ত করছি। গুরুত্বের সঙ্গে আবু সাঈদের হত্যার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত হওয়ার পরেই হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করবো।’
 

তিনি জানান, এর আগে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে মামলা হয়েছে। সেটা হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেও মামলা করতে কোনও বিধি নিষেধ নেই। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতা পেলেই অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

তদন্ত দল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলীসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যদের সঙ্গে দিনভর কথা বলে জবানবন্দি গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।

পরিবারের সদস্য ও বেরোবির উপাচার্য জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা প্রত্যাশা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের।

শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘১৬ জুলাই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আমার ভাইকে। এরপর প্রহসনমূলক একটি মামলাও করে পুলিশ। সরকার পতনের পর আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করলেও সে মামলার কোন অগ্রগতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করি সঠিক বিচার পাব।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে পিবিআই তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের রিপোর্ট দেয় নি। এখনও মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত শেষে সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যাবে।’