ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা ২০২৪ / দারুণ একটি বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

ফিরে দেখা ২০২৪ / দারুণ একটি বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

বছর প্রায় শেষের দিকে। আর ক’দিন পরই বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। এরমধ্যে পুরো বছরের হিসাব কষতে শুরু করেছেন সবাই। ঠিক তেমনি ফুটবলপ্রেমীরাও হয়তো নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের প্রাপি-অপ্রাপ্তির সব গল্প জানাবো এই প্রতিবেদনে।

টানা দ্বিতীয়বার সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল:

 

বছরের শেষটা দিয়েই শুরু করা যাক। কথায় আছে; শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই। মেয়েরা ফুটবল খেলে বলে অনেকেই হয়তো গুরুত্ব দেন না। তবে এই মেয়েরাই পরপর দুবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছে।

 

বছরের শেষের দিকে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হোঁচট খায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা! দলের ভেতর ছিল নানা কোন্দল, কোচ নিয়ে ছিল একেক জনের একেক মত। এ নিয়ে নারী ফুটবল দলের ভেতরের অবস্থাটাও স্বাভাবিক ছিল না। 
 
অক্টোবর মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে বাংলাদেশ যখন নেপালে, ঠিক তখনই বাফুফের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ফেডারেশনের কর্তারা। এর মাঝেই আবার খবর আসে, সাবিনারা নাকি বেতন না পেয়েই গেছেন সাফ খেলতে। 
 
এতসব ঝামেলার মাঝে বাংলাদেশ নারী দলটা হয়তো এবার গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়বেন। এমন শঙ্কাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পাকিস্তানের সঙ্গে সাফে ড্র করার পর। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই কী দলটার এমন দশা? হতেও পারে, কেননা ঐ সময়ই কোচকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খেলোয়াড়রা। 
 
 
প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণারা কী পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? তার ওপর আবার পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত! তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল পাকিস্তানের বিপক্ষেই যখন বাংলাদেশ হারতে হারতে ড্র করলো, তখন ভারতের সাথে না জানি কী করবে তারা! 
 
এমন সব ভয়, এমন সব শঙ্কা নিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে বাংলার মেয়েরা। ২৩ অক্টোবর কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে ভারতের জালে গুণে গুণে ৩টি গোল করলেন তহুরা-সানজিদারা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে বাংলাদেশের জয় ৩-১ গোলে। আর তাতেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। 
 
এমন জয়ের পর সব কোন্দল যেন উড়ে যায় মুহূর্তেই। সব সমালোচনা, সব অভিযোগ তখন আর কিছুই যেন নেই। বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষুধা যেন মেটেনি। তাদের ক্ষুধা আরও বেড়ে যায়। তাইতো সেমিফাইনালে ভুটানকে পেয়ে তাদের জালে গোল দিলো ৭টি! বিপরীতে অবশ্য একটি গোল হজম করতে হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। 
 
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে আর মাত্র একটি ধাপ। এই ধাপ পেরোতে পারলেই ব্যাক টুক ব্যাক সাফ চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। এমন স্বপ্ন নিয়েই গত ৩০ অক্টোবর সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামে তহুরা-সানজিদারা। শেষ পর্যন্ত তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো উইমেন্স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।
  

আরও একটি ছাদ খোলা বাস:

 

প্রথমবার যখন সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ, তখন সানজিদার একটা স্ট্যাটাস আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল মুহূর্তেই। তার স্ট্যাটাসের পর তখন পুরো দলকে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দিয়েছিল বাফুফে। বিমানবন্দরে নামার পর বাফুফে পর্যন্ত পুরোটা রাস্তা সানজিদারা এসেছিলেন ছাদখোলা বাসে। 
 
 
টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের পর সেই ছাদখোলা বাসের কথাটা আবারও সামনে আসে। এবারও কী তাদের দেয়া হবে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা? এমন প্রশ্ন সামনে আসার সাথে সাথেই ছাদখোলা বাসের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছিল ফেডারেশন। তাদের জন্য বিমানবন্দরে রাখা ছিল ছাদখোলা বাস।
 
তার আগে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন তাবিথ আউয়াল। দীর্ঘদিন পর শেষ হয় সালাউদ্দিন অধ্যায়। নতুন সভাপতি মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে অর্থের দিকেও তাকাননি। ছাদখোলা বাসের সব খরচ তো ফেডারেশনই বহন করেছিল। 
 
বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন কোচ বাটলার আর অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে দলটি ছাদখোলা বাসে চড়ে বাফুফে ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। যেখানে ছিলেন সমর্থকরা, ছিলেন সাংবাদিকরাও। বাংলাদেশ ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু যে ভবনকে ঘিরে, সেই ভবনেই চলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন বাফুফে ভবনে নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসও নারী দলকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন ডেকে নিয়ে।  
  

বছরের শুরুতেই হোঁচট: 

 

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল বছরটা শুরু করেছিল হার দিয়ে। যদিও এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সে বছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তারপর ২০২৪ সালের ৩১মে খেলতে মাঠে নামে মেয়েরা। এর মাঝে আর কোনো ম্যাচ খেলেনি তারা। চাইনিজ তাইপে’র বিপক্ষে এ বছরের শুরুর ম্যাচেই হোঁচট খায় সাবিনারা। তাদের কাছে হারে ৪-০ গোলের ব্যবধানে। পরের ম্যাচে অবশ্য তাদের বিপক্ষে লড়াই করেছে। তবুও হার এড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে বাংলাদেশকে হারতে হয়। 
  

ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো:

 

মাঝের এক মাস কোনও খেলা ছিল না। জুলাই মাসে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত, ২৪ জুলাই সেই ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিল ৫-১ গোলে। পরের ম্যাচে তাদের কাছে অবশ্য দুটি গোল হজম করতে হয়েছিল সাবিনাদের, তবে দিয়েছিল ৪টি।

 
পুরো বছরে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ খেলেছে মোট ৮টি। তার মধ্যে চাইনিজ তাইপে’র বিপক্ষে দুটি ম্যাচ ছাড়া আর কোনও ম্যাচে হারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুধু একটি ম্যাচ তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করেছিল। বাকি সবগুলোতেই জয় পেয়েছে বাংলার মেয়েরা। 
  

বেতন-ভাতার নাম নেই, সংবর্ধনা নিয়ে মাতামাতি: 

 

বাংলাদেশের মেয়েরা দ্বিতীয়বারের মতো সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই অর্জন যে নেহাত কম কিছু নয়। তাইতো একের পর এক সংবর্ধনা পেয়েছে নারী ফুটবলাররা। ফেডারেশন তো তাদেরকে সংবর্ধনা দিয়েছেই। পেয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। 
 
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও বসে ছিল না। মেয়েদের এমন অর্জনে তারাও অভিনন্দন জানিয়েছে। বিসিবি থেকেও আর্থিক পুরস্কার পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন দল। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের ডেকে নিয়ে দিয়েছেন সংবর্ধনা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। এছাড়া ওয়ালটন থেকে প্রত্যেকে পেয়েছেন একটি করে ফ্রিজ। এছাড়া আরও অনেকেই তাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন।  
 
বেতন ও ম্যাচ ফি বকেয়া না পেয়েই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে বকেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। এএফসি কংগ্রেস থেকে ফিরে সম্প্রতি বাফুফের নির্বাহী সদস্য ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ দৃঢ় কন্ঠে দাবি করেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফেডারেশন ফুটবলারদের বেতন দেয় না, ফুটবলাররা ক্লাব থেকে আয় করে। শুধু বাংলাদেশ দেয় কারণ আমাদের প্রেক্ষাপট আলাদা।’ এরপর অবশ্য সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়েদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয় বাফুফে থেকে। 
 
সব মিলিয়ে পুরো বছরটি বেশ ভালোই কেটেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। শিরোপা জিতেছে, ফুটবলাররা পেয়েছেন সংবর্ধনা, সেইসাথে পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। মেয়েরাও দেশকে উপহার দিয়েছেন দারুণ এক অর্জন; যা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:৪৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
৩ বার পড়া হয়েছে

ফিরে দেখা ২০২৪ / দারুণ একটি বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

আপডেট সময় ০৯:৪৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

ফিরে দেখা ২০২৪ / দারুণ একটি বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

বছর প্রায় শেষের দিকে। আর ক’দিন পরই বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। এরমধ্যে পুরো বছরের হিসাব কষতে শুরু করেছেন সবাই। ঠিক তেমনি ফুটবলপ্রেমীরাও হয়তো নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের প্রাপি-অপ্রাপ্তির সব গল্প জানাবো এই প্রতিবেদনে।

টানা দ্বিতীয়বার সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল:

 

বছরের শেষটা দিয়েই শুরু করা যাক। কথায় আছে; শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই। মেয়েরা ফুটবল খেলে বলে অনেকেই হয়তো গুরুত্ব দেন না। তবে এই মেয়েরাই পরপর দুবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছে।

 

বছরের শেষের দিকে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হোঁচট খায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা! দলের ভেতর ছিল নানা কোন্দল, কোচ নিয়ে ছিল একেক জনের একেক মত। এ নিয়ে নারী ফুটবল দলের ভেতরের অবস্থাটাও স্বাভাবিক ছিল না। 
 
অক্টোবর মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে বাংলাদেশ যখন নেপালে, ঠিক তখনই বাফুফের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ফেডারেশনের কর্তারা। এর মাঝেই আবার খবর আসে, সাবিনারা নাকি বেতন না পেয়েই গেছেন সাফ খেলতে। 
 
এতসব ঝামেলার মাঝে বাংলাদেশ নারী দলটা হয়তো এবার গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়বেন। এমন শঙ্কাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পাকিস্তানের সঙ্গে সাফে ড্র করার পর। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই কী দলটার এমন দশা? হতেও পারে, কেননা ঐ সময়ই কোচকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খেলোয়াড়রা। 
 
 
প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণারা কী পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? তার ওপর আবার পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত! তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল পাকিস্তানের বিপক্ষেই যখন বাংলাদেশ হারতে হারতে ড্র করলো, তখন ভারতের সাথে না জানি কী করবে তারা! 
 
এমন সব ভয়, এমন সব শঙ্কা নিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে বাংলার মেয়েরা। ২৩ অক্টোবর কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে ভারতের জালে গুণে গুণে ৩টি গোল করলেন তহুরা-সানজিদারা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে বাংলাদেশের জয় ৩-১ গোলে। আর তাতেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। 
 
এমন জয়ের পর সব কোন্দল যেন উড়ে যায় মুহূর্তেই। সব সমালোচনা, সব অভিযোগ তখন আর কিছুই যেন নেই। বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষুধা যেন মেটেনি। তাদের ক্ষুধা আরও বেড়ে যায়। তাইতো সেমিফাইনালে ভুটানকে পেয়ে তাদের জালে গোল দিলো ৭টি! বিপরীতে অবশ্য একটি গোল হজম করতে হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। 
 
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে আর মাত্র একটি ধাপ। এই ধাপ পেরোতে পারলেই ব্যাক টুক ব্যাক সাফ চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। এমন স্বপ্ন নিয়েই গত ৩০ অক্টোবর সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামে তহুরা-সানজিদারা। শেষ পর্যন্ত তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো উইমেন্স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।
  

আরও একটি ছাদ খোলা বাস:

 

প্রথমবার যখন সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ, তখন সানজিদার একটা স্ট্যাটাস আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল মুহূর্তেই। তার স্ট্যাটাসের পর তখন পুরো দলকে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দিয়েছিল বাফুফে। বিমানবন্দরে নামার পর বাফুফে পর্যন্ত পুরোটা রাস্তা সানজিদারা এসেছিলেন ছাদখোলা বাসে। 
 
 
টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের পর সেই ছাদখোলা বাসের কথাটা আবারও সামনে আসে। এবারও কী তাদের দেয়া হবে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা? এমন প্রশ্ন সামনে আসার সাথে সাথেই ছাদখোলা বাসের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছিল ফেডারেশন। তাদের জন্য বিমানবন্দরে রাখা ছিল ছাদখোলা বাস।
 
তার আগে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন তাবিথ আউয়াল। দীর্ঘদিন পর শেষ হয় সালাউদ্দিন অধ্যায়। নতুন সভাপতি মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে অর্থের দিকেও তাকাননি। ছাদখোলা বাসের সব খরচ তো ফেডারেশনই বহন করেছিল। 
 
বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন কোচ বাটলার আর অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে দলটি ছাদখোলা বাসে চড়ে বাফুফে ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। যেখানে ছিলেন সমর্থকরা, ছিলেন সাংবাদিকরাও। বাংলাদেশ ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু যে ভবনকে ঘিরে, সেই ভবনেই চলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন বাফুফে ভবনে নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসও নারী দলকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন ডেকে নিয়ে।  
  

বছরের শুরুতেই হোঁচট: 

 

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল বছরটা শুরু করেছিল হার দিয়ে। যদিও এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সে বছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তারপর ২০২৪ সালের ৩১মে খেলতে মাঠে নামে মেয়েরা। এর মাঝে আর কোনো ম্যাচ খেলেনি তারা। চাইনিজ তাইপে’র বিপক্ষে এ বছরের শুরুর ম্যাচেই হোঁচট খায় সাবিনারা। তাদের কাছে হারে ৪-০ গোলের ব্যবধানে। পরের ম্যাচে অবশ্য তাদের বিপক্ষে লড়াই করেছে। তবুও হার এড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে বাংলাদেশকে হারতে হয়। 
  

ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো:

 

মাঝের এক মাস কোনও খেলা ছিল না। জুলাই মাসে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত, ২৪ জুলাই সেই ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিল ৫-১ গোলে। পরের ম্যাচে তাদের কাছে অবশ্য দুটি গোল হজম করতে হয়েছিল সাবিনাদের, তবে দিয়েছিল ৪টি।

 
পুরো বছরে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ খেলেছে মোট ৮টি। তার মধ্যে চাইনিজ তাইপে’র বিপক্ষে দুটি ম্যাচ ছাড়া আর কোনও ম্যাচে হারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুধু একটি ম্যাচ তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করেছিল। বাকি সবগুলোতেই জয় পেয়েছে বাংলার মেয়েরা। 
  

বেতন-ভাতার নাম নেই, সংবর্ধনা নিয়ে মাতামাতি: 

 

বাংলাদেশের মেয়েরা দ্বিতীয়বারের মতো সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই অর্জন যে নেহাত কম কিছু নয়। তাইতো একের পর এক সংবর্ধনা পেয়েছে নারী ফুটবলাররা। ফেডারেশন তো তাদেরকে সংবর্ধনা দিয়েছেই। পেয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। 
 
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও বসে ছিল না। মেয়েদের এমন অর্জনে তারাও অভিনন্দন জানিয়েছে। বিসিবি থেকেও আর্থিক পুরস্কার পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন দল। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের ডেকে নিয়ে দিয়েছেন সংবর্ধনা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। এছাড়া ওয়ালটন থেকে প্রত্যেকে পেয়েছেন একটি করে ফ্রিজ। এছাড়া আরও অনেকেই তাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন।  
 
বেতন ও ম্যাচ ফি বকেয়া না পেয়েই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে বকেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। এএফসি কংগ্রেস থেকে ফিরে সম্প্রতি বাফুফের নির্বাহী সদস্য ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ দৃঢ় কন্ঠে দাবি করেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফেডারেশন ফুটবলারদের বেতন দেয় না, ফুটবলাররা ক্লাব থেকে আয় করে। শুধু বাংলাদেশ দেয় কারণ আমাদের প্রেক্ষাপট আলাদা।’ এরপর অবশ্য সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়েদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয় বাফুফে থেকে। 
 
সব মিলিয়ে পুরো বছরটি বেশ ভালোই কেটেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। শিরোপা জিতেছে, ফুটবলাররা পেয়েছেন সংবর্ধনা, সেইসাথে পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। মেয়েরাও দেশকে উপহার দিয়েছেন দারুণ এক অর্জন; যা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।