ঢাকা ০৯:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘনার ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভেসে উঠছে মরা মাছ-সাপ-ব্যাঙ!

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

মেঘনার ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভেসে উঠছে মরা মাছ-সাপ-ব্যাঙ!

আবারো চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনায় ভেসে উঠছে বিপুল পরিমাণ মাছ, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। এক সপ্তাহ ধরে মেঘনার এখলাশপুর থেকে ছটাকি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।

জানা যায়, হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে নদীর পানির স্রোতে ও ঢেউয়ে এসব মাছ ও প্রাণী তীরে এসে স্তূপ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট আকারে মাছের মৃত্যুর হার বেড়েছে। এতে দেশি জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী হুমকিতে রয়েছে; বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।


স্থানীয়রা জানান, এসব মরা মাছ পানির ঢেউয়ের সঙ্গে তীরে উঠে আসছে। এতে নদীপাড়ের বেশকিছু এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে; একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর দশানী মোহনপুর, ষাটনল, জেলেপাড়া, বাবু বাজার, এলাকায় মেঘনা নদীর পানিতে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। এতে পানিতে দুর্গন্ধ  ছড়াচ্ছে।


ষাটনলের জেলেপাড়ার মন্টু দাস জানান, নদীতে পানি কমে গেলেই ছোট ছোট মাছ মরে ভেসে ওঠে। গত কয়েকদিন ধরে এমন পরিস্থিতি। এর আগেও এভাবে মাছ মরে যেতে দেখেছেন তিনি।
 

দশানী এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দা আলী আকবর সরকার জানান, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মেঘনার সঙ্গে মিশে দক্ষিণের ভাটিতে নামছে। তবে এসব জোয়ার ভাটার প্রভাব কমে যাওয়ায় ওই দুই নদীপাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত রাসায়নিক বর্জ্য মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসছে। এতে ছোট মাছের সঙ্গে বড় মাছও মরে ভেসে উঠছে। আর এসব পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম জানান, গত ২ বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটে। এবারও সেই একই চিত্র। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে মৎস্য বিভাগকে জানানো হয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার নদীর পানি এখানে প্রবেশ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে নদীর পানির রঙ বদলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষিত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হয়ে রঙ পরিবর্তন করেছে। দূষিত পানির কারণে পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, পোনা ও জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
 

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, মাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা, বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে ভেসে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে নদীর অবস্থা দেখতে পাঠানো হয়েছে। পানিতে মিশে থাকা দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম জানান, কেন নদীর মাছ মরে যাচ্ছে? খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানতে পারবো।
  

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:৩২:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
৪ বার পড়া হয়েছে

মেঘনার ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভেসে উঠছে মরা মাছ-সাপ-ব্যাঙ!

আপডেট সময় ১০:৩২:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

মেঘনার ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভেসে উঠছে মরা মাছ-সাপ-ব্যাঙ!

আবারো চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনায় ভেসে উঠছে বিপুল পরিমাণ মাছ, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। এক সপ্তাহ ধরে মেঘনার এখলাশপুর থেকে ছটাকি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।

জানা যায়, হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে নদীর পানির স্রোতে ও ঢেউয়ে এসব মাছ ও প্রাণী তীরে এসে স্তূপ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট আকারে মাছের মৃত্যুর হার বেড়েছে। এতে দেশি জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী হুমকিতে রয়েছে; বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।


স্থানীয়রা জানান, এসব মরা মাছ পানির ঢেউয়ের সঙ্গে তীরে উঠে আসছে। এতে নদীপাড়ের বেশকিছু এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে; একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর দশানী মোহনপুর, ষাটনল, জেলেপাড়া, বাবু বাজার, এলাকায় মেঘনা নদীর পানিতে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। এতে পানিতে দুর্গন্ধ  ছড়াচ্ছে।


ষাটনলের জেলেপাড়ার মন্টু দাস জানান, নদীতে পানি কমে গেলেই ছোট ছোট মাছ মরে ভেসে ওঠে। গত কয়েকদিন ধরে এমন পরিস্থিতি। এর আগেও এভাবে মাছ মরে যেতে দেখেছেন তিনি।
 

দশানী এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দা আলী আকবর সরকার জানান, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মেঘনার সঙ্গে মিশে দক্ষিণের ভাটিতে নামছে। তবে এসব জোয়ার ভাটার প্রভাব কমে যাওয়ায় ওই দুই নদীপাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত রাসায়নিক বর্জ্য মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসছে। এতে ছোট মাছের সঙ্গে বড় মাছও মরে ভেসে উঠছে। আর এসব পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম জানান, গত ২ বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটে। এবারও সেই একই চিত্র। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে মৎস্য বিভাগকে জানানো হয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার নদীর পানি এখানে প্রবেশ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে নদীর পানির রঙ বদলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষিত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হয়ে রঙ পরিবর্তন করেছে। দূষিত পানির কারণে পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, পোনা ও জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
 

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, মাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা, বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে ভেসে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে নদীর অবস্থা দেখতে পাঠানো হয়েছে। পানিতে মিশে থাকা দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম জানান, কেন নদীর মাছ মরে যাচ্ছে? খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানতে পারবো।