ঢাকা ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
Logo শেখ হাসিনা-কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ Logo বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কমেছে, অর্থায়নে বেড়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস নির্ভরতা Logo আজ শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে শুনানি Logo ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল Logo বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (১৫ জুন) Logo ইরানে হামলার নিন্দা জানালো সৌদি, প্রিন্স সালমান-পেজেশকিয়ান ফোনালাপ Logo রাতভর হামলায় দিশেহারা ইসরায়েল, এখনও নিখোঁজ ৩৫ Logo ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে প্রাণহানি বেড়ে ১২, আহত দুই শতাধিক Logo আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন: রাশেদ খাঁন Logo উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ভাই হারালেন বিক্রান্ত ম্যাসি

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উৎপাদিত গুড়ের দামও ভালো পাচ্ছেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও অপ্রতুল গাছির উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা কম বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের দাবি, এ বছর তিন হাজার ১০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাড়াতে গাছি তৈরিতে প্রতিবছরই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।


যশোরের নলেনগুড়, পাটালি ও ঝোলা গুড়ের সুনাম দেশব্যাপী। গুড়ের চাহিদা থাকায় প্রতিবছর কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুর গাছ ছেঁটে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়া ও অপ্রতুল গাছির কারণে রস আহরণের গাছের সংখ্যা কমলেও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরাসহ  ৮ উপজেলার গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে খুব ভোরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও তা জ্বালিয়ে দিনের অর্ধেকটা সময় পার করছেন তারা এবং তাদের উৎপাদিত গুড়ের দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা। হাটে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অনেকে বাড়ি থেকে গুড় সংগ্রহ করায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।


যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরায় বেশ কয়েকজন গাছির দেখা মেলে। তারা ব্যস্ত ছিলেন গাছ থেকে রস আহরণের কাজে। ঘন কুয়াশা ঘেরা সকালে গাছে উঠে রসের হাঁড়ি (ভাড়) নামানোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিজস্ব বুদ্ধিতে তারা তৈরি করে নিয়েছেন বাঁশের লম্বা ছড়ি। নিচ থেকে ছড়িতে হাঁড়ির দড়িটিকে আটকে নামিয়ে আনছেন। সেই রস বড় কলসিতে ঢেলে আবার হাড়ি জুড়ে দিচ্ছেন গাছে। এই মাঠেই রয়েছে দুই শতাধিক খেজুর গাছ। এছাড়া রাস্তার দুই পাশ ও ধানক্ষেতের আইলের পাশে রয়েছে অসংখ্য গাছ।
 

গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর একটু বিলম্বে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে গাছ কাটা এবং রস সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে। তখন শীতের তীব্রতা কম থাকায় রসের পরিমাণ কম ছিল। ফলে রস ও গুড়প্রেমীদের চাহিদা মতো সরবরাহ করা সম্ভব হতো না। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে আগের তুলনায় রসের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখছেন তারা।

নাজিম উদ্দিন নামে এক গাছি বলেন, এবার ৪৩টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। শীত মৌসুমের শুরু থেকে গাছগুলো কাটছি। আছ সাত হাঁড়ি রস পেয়েছি। এই রস জ্বাল দিলে অন্তত পাঁচ-ছয় কেজি গুড় হবে।

মিলন হোসেন বলেন, বংশপরম্পরায় এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। এটি হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ। এজন্য অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেক খেজুর গাছ পড়ে থাকে। সরকারিভাবে গাছি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করলে গাছি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের গুড়ের উৎপাদন আরও বাড়ত।

মিজানুর রহমান নামে অপর এক গাছি বলেন, নিজের গাছ নেই। ২০ বছর ধরে লিজ নিয়ে খেজুর গাছ কাটি। গাছের মালিকদের এই মৌসুমে দুই থেকে চার হাঁড়ি পর্যন্ত গুড় দেয়া লাগে। রস কিংবা গুড় তৈরি করে বিক্রির পর যা আয় হয়, তা কৃষি মজুরির চেয়ে বেশি। এজন্য কষ্ট হলেও তিন মাস রস ও গুড়ের ব্যবসা করছি।

তিনি আরও বলেন, এ বছর খেজুর রস ও গুড়ের দাম বেশ ভালো। প্রতি ভাড় রস ৫০০ টাকা এবং গুড় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
 

এবার নিরাপদ রস সংগ্রহ এবং গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে জেলা কৃষি বিভাগ গাছিদের প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু তালহা। 

তিনি‌ বলেন, যশোরের খেজুরের গুড় একটি জিআই পণ্য। এ গুড়ের সুনাম দেশব্যাপী। কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় রস আহরণ ও গুড় উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর ৩ হাজার ৪০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়েছিল। এবছর ৩ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর গুড়ের দাম বেশ ভালো, ফলে কৃষক লাভবান হবেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ২৩ লাখ খেজুরের গাছ আছে। যার মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ গাছ থেকে রস আহরণ করে সাড়ে ৬ হাজার ৩০০ গাছি।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:০৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
৪২ বার পড়া হয়েছে

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা

আপডেট সময় ১০:০৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

যশোরে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উৎপাদিত গুড়ের দামও ভালো পাচ্ছেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও অপ্রতুল গাছির উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা কম বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের দাবি, এ বছর তিন হাজার ১০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাড়াতে গাছি তৈরিতে প্রতিবছরই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।


যশোরের নলেনগুড়, পাটালি ও ঝোলা গুড়ের সুনাম দেশব্যাপী। গুড়ের চাহিদা থাকায় প্রতিবছর কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুর গাছ ছেঁটে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়া ও অপ্রতুল গাছির কারণে রস আহরণের গাছের সংখ্যা কমলেও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরাসহ  ৮ উপজেলার গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে খুব ভোরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও তা জ্বালিয়ে দিনের অর্ধেকটা সময় পার করছেন তারা এবং তাদের উৎপাদিত গুড়ের দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা। হাটে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অনেকে বাড়ি থেকে গুড় সংগ্রহ করায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।


যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরায় বেশ কয়েকজন গাছির দেখা মেলে। তারা ব্যস্ত ছিলেন গাছ থেকে রস আহরণের কাজে। ঘন কুয়াশা ঘেরা সকালে গাছে উঠে রসের হাঁড়ি (ভাড়) নামানোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিজস্ব বুদ্ধিতে তারা তৈরি করে নিয়েছেন বাঁশের লম্বা ছড়ি। নিচ থেকে ছড়িতে হাঁড়ির দড়িটিকে আটকে নামিয়ে আনছেন। সেই রস বড় কলসিতে ঢেলে আবার হাড়ি জুড়ে দিচ্ছেন গাছে। এই মাঠেই রয়েছে দুই শতাধিক খেজুর গাছ। এছাড়া রাস্তার দুই পাশ ও ধানক্ষেতের আইলের পাশে রয়েছে অসংখ্য গাছ।
 

গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর একটু বিলম্বে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে গাছ কাটা এবং রস সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে। তখন শীতের তীব্রতা কম থাকায় রসের পরিমাণ কম ছিল। ফলে রস ও গুড়প্রেমীদের চাহিদা মতো সরবরাহ করা সম্ভব হতো না। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে আগের তুলনায় রসের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখছেন তারা।

নাজিম উদ্দিন নামে এক গাছি বলেন, এবার ৪৩টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। শীত মৌসুমের শুরু থেকে গাছগুলো কাটছি। আছ সাত হাঁড়ি রস পেয়েছি। এই রস জ্বাল দিলে অন্তত পাঁচ-ছয় কেজি গুড় হবে।

মিলন হোসেন বলেন, বংশপরম্পরায় এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। এটি হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ। এজন্য অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেক খেজুর গাছ পড়ে থাকে। সরকারিভাবে গাছি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করলে গাছি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের গুড়ের উৎপাদন আরও বাড়ত।

মিজানুর রহমান নামে অপর এক গাছি বলেন, নিজের গাছ নেই। ২০ বছর ধরে লিজ নিয়ে খেজুর গাছ কাটি। গাছের মালিকদের এই মৌসুমে দুই থেকে চার হাঁড়ি পর্যন্ত গুড় দেয়া লাগে। রস কিংবা গুড় তৈরি করে বিক্রির পর যা আয় হয়, তা কৃষি মজুরির চেয়ে বেশি। এজন্য কষ্ট হলেও তিন মাস রস ও গুড়ের ব্যবসা করছি।

তিনি আরও বলেন, এ বছর খেজুর রস ও গুড়ের দাম বেশ ভালো। প্রতি ভাড় রস ৫০০ টাকা এবং গুড় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
 

এবার নিরাপদ রস সংগ্রহ এবং গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে জেলা কৃষি বিভাগ গাছিদের প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু তালহা। 

তিনি‌ বলেন, যশোরের খেজুরের গুড় একটি জিআই পণ্য। এ গুড়ের সুনাম দেশব্যাপী। কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় রস আহরণ ও গুড় উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর ৩ হাজার ৪০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়েছিল। এবছর ৩ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর গুড়ের দাম বেশ ভালো, ফলে কৃষক লাভবান হবেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ২৩ লাখ খেজুরের গাছ আছে। যার মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ গাছ থেকে রস আহরণ করে সাড়ে ৬ হাজার ৩০০ গাছি।