ব্রেকিং নিউজ :
হেমন্তে উঁকি দিতে শুরু করেছে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘা!
হেমন্তে উঁকি দিতে শুরু করেছে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘা!
শরৎ শেষে প্রকৃতিতে চলছে হেমন্ত। এর মাঝে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মেঘমুক্ত আকাশে সৌন্দর্য মেলে ধরতে শুরু করেছে হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। পর্বতশৃঙ্গটির মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রতিদিন ভিড় করছে পর্যটকেরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মেঘ কাটিয়ে মুক্ত আকাশে উঁকি দিতে দেখা যায় পর্বতটিকে। তবে গত কয়েক দিন থেকে মেঘের কারণে পরিষ্কার ভাবে আকাশে দেখা না দিলেও বৃহস্পতিবার জেলার সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন রূপে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরের সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনও শুভ্র, কখনো গোলাপি আবারও কখনও লাল রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এই পর্বত চূড়াটি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসলে তখন রঙ হয় সাদা। দিনের বেলা মেঘে ঢাকা পড়লেও বিকেলের দিকে মাঝে মধ্যে উঁকি দিতেও দেখা গেছে। এরই মাঝে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিড় করছেন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা। খালি চোখে পর্বতশৃঙ্গটির এমন মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে পেয়ে খুশি তারা।
তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে মহানন্দা নদীর তীরে কথা হয় রাজশাহী থেকে আসা আবির হোসেনের সঙ্গে।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের পরিকল্পনা ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার। গতকাল এসে দেখতে পায় নি। তবে আজ ভোরে পরিষ্কার ভাবে পর্বতটির দেখা মিলেছে।
নওগাঁ থেকে বাইক নিয়ে ঘুরতে আসা সুমন ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, আমরা বন্ধুরা ভোরে বাইক নিয়ে তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। তবে এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে মহানন্দা নদীর তীর থেকে পর্বতটি দেখতে পেয়েছি। আমাদের এই যাত্রা সফল হয়েছে।
ঢাকা থেকে আসা রাজিউর রহমান ও আলমগীর হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, আমাদের আজ সকালে পৌঁছাতে একটু দেরি হওয়ায় দেখার সৌভাগ্য হয় নি। অন্য পর্যটক ও স্থানীরা জানালো যে সকালে দেখা গেছে। যেহেতু আজ দেখার সৌভাগ্য হয় নি, তাই আগামীকাল দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় থাকবো। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে তারপর বাড়ির পথে রওনা করবো।
চট্টগ্রাম থেকে আসা সুজন ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, শুনেছি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ভাগ্যের ব্যাপার থাকে। তা আজ প্রমাণিত হয়েছে। কারণ গত কয়েকদিন আগে পরিবার নিয়ে আসা আমার এক বন্ধুবর ভাই দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে গেছে। তবে আমরা এসে তা দেখতে পেয়েছি।
এদিকে বিগত কয়েক দিন ধরে পর্যটকেরা অপেক্ষা করেও দেখা পাননি অপরূপ সৌন্দর্যের এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। অক্টোবরের শেষের দিকে পর্যটকেরা উপভোগ করছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার বাহারি রূপ। কেউবা আবার তা মোবাইল ফোনে ধারণ করার চেষ্টাও করছে।
স্থানীয়রা জানান, কেবল মেঘমুক্ত ও কুয়াশামুক্ত গাঢ় নীল আকাশ থাকলেই দেখা দেয় হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গ। গত কয়েকদিন অবয়ব দেখা দিলেও বৃহস্পতিবার সকালে পরিষ্কার ভাবে আকাশে দেখা দিয়েছে। ভোর সকালে সব থেকে ভালো দেখার কারণ হচ্ছে আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। তাই পর্যটকেরা আসলে ফজরের আযানের পরপরই পৌঁছালে অনেক সময় পর্বতটি দেখার সৌভাগ্য হয়, যা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে দেখা দেবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী সময় সংবাদকে বলেন, সৌন্দর্যপূর্ণ কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয়। হোটেল আবাসিক থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোন সমস্যায় পড়লে আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে তাই পর্যটকেরা এখানে আসুক। নিরাপত্তা প্রচেষ্টার বিষয়টি তারা দেখুক, আমাদের ভালো লাগবে এবং তেঁতুলিয়াবাসীরও ভালো লাগবে।
আরও জানা গেছে, সর্বোচ্চ এই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে অনেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে আবার কেউ কেউ নেপালে যান। তবে দূরত্ব কম হওয়ায় হেমন্তের এ সময়টিতে পঞ্চগড়সহ তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখে দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর পাহাড়টির সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর, সকাল ও বিকেল।