শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের দেশ মাল্টার পাসপোর্ট নেয়ার আবেদন করেছিলেন টিউলিপে চাচি শাহীন সিদ্দিক ও তার চাচাতো বোন বুশরা সিদ্দিক। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ‘অর্থপাচার, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ঘুষ লেনদেনের’ অভিযোগ থাকায় পাসপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, ফাঁস হওয়ার নথিতে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও টিউলিপের চাচি শাহীন সিদ্দিক ২০১৩ সালে নিজের জন্য মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন করেন। সেই সময় মাল্টার নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাজ্যভিক্তিক অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স তা প্রত্যাখ্যান করে।
প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ‘প্রচ্ছায়া’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ করে যে কোম্পানির বিরুদ্ধে ‘ঢাকায় অবৈধভাবে মূল্যবান সরকারি জমি বাগিয়ে নেয়ার’ অভিযোগ বাংলাদেশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল।
শাহীন সিদ্দিক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসানের পর গত অক্টোবরে তারিক ও শাহীনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে সরকার। এছাড়া তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
প্রতিবেদন মতে, তারিকের পরিবার, যারা এখন শেখ হাসিনার শাসনামলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশ ও দেশের নাগরিকদের সম্পদ হাতিয়ে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে, কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে।
পাসপোর্ট প্রত্যাখ্যানে হ্যানলির সিদ্ধান্তে যে অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয় তা মূলত ২০১২ সালের। শাহীন সিদ্দিকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রচ্ছায়া নামে একটি কোম্পানি ঢাকার মূল্যবান জমি দখল করেছিল। শাহীন তার ২০১৩ সালের পাসপোর্ট আবেদনে প্রচ্ছায়াতে তার ভূমিকা উল্লেখ করেছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে গত বছর সরকারের পতন পর্যন্ত শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তারিক সিদ্দিক দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রচ্ছায়ার জন্য সরকারি জমি দখল করেছিলেন। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি জমিটি বিক্রি করে দেয়।
প্রথমবার প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করে পাসপোর্ট না পাওয়ায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার লন্ডনে থাকা নিজের মেয়ে বুশরার সঙ্গে যৌথভাবে আবেদন করেন শাহীন সিদ্দিক। ২০১১ সালের একটি নথি অনুসারে, বুশরা প্রচ্ছায়ার অন্যতম পরিচালক ছিলেন।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে করা সেই যৌথ আবেদনের নথি অনুসারে, মাল্টার পাসপোর্টের জন্য মা শাহীন সিদ্দিক ও মেয়ে বুশরাকে যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড ব্যয় করতে হতো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হ্যানলির ফি ছিল আরও ৭০ হাজার পাউন্ড।
আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন। আগের দুই মাসে মোট ১১টি লেনদেনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাসপোর্ট খরচ জমা করা হয়েছিল। কিন্তু এসব অর্থের উৎস কী ছিল, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
তারিক সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকীর মেয়ে ওই সময় স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন। পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়েছিলেন। তার ফ্ল্যাটটি টিউলিপের লন্ডনের কিংস ক্রস ফ্লাটের খুব কাছে অবস্থিত।
টিউলিপের ফ্লাটটি ২০০৪ সালে এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী তাকে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি কেন টিউলিপকে এত দামী ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এবং এ নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।