গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েল, বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
গাজা সিটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিতে নতুন পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার ঠিক একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার পুরো এলাকা সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেন। ‘আলজাজিরা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পদক্ষেপকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে, কারণ এতে গাজার মানবিক সংকট আরও প্রকট হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে বলেন, এটি উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেন, ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশ এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের বিরুদ্ধে যায়।
ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিক্রিয়া:
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দপ্তর এ পরিকল্পনাকে ‘পুরোপুরি অপরাধমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং এটিকে গণহত্যার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এতে গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিরা চরম ঝুঁকিতে পড়বে। ইসলামিক জিহাদ এটিকে গণবিনাশ যুদ্ধের আরেকটি অধ্যায় বলেছে।
ইউরোপীয় নেতাদের মতামত:
ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ তাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনও পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
পশ্চিমা দেশগুলোর সমন্বিত নিন্দা:
অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, এই সিদ্ধান্ত ভুল এবং এর ফলে সহিংসতা বাড়বে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া:
- জার্মানি: সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা।
- ফ্রান্স: এটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ বলে আখ্যা দেয়।
- চীন: গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।
- তুরস্ক: ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য।
- মিসর: একে গণবিনাশের যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে।
- সৌদি আরব: জাতিগত নির্মূলের অংশ বলেই নিন্দা জানায়।
মধ্যপ্রাচ্য ও এশীয় প্রতিক্রিয়া:
- ইরান: এই সিদ্ধান্তকে গণহত্যার স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে।
- কাতার: উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করে।
- জর্ডান: বলেছে, এ পদক্ষেপ দুই-রাষ্ট্র সমাধান ধ্বংস করবে।
- ইউএই: পরিকল্পনার বিপর্যয়কর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করে।
- ইন্দোনেশিয়া: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানায়।
- কানাডা: প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, এই পরিকল্পনা ভুল এবং বন্দিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াবে।
- অস্ট্রেলিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং একে স্থায়ী উচ্ছেদের প্রয়াস বলে অভিহিত করেন।
পাকিস্তানের অবস্থান:
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে এবং তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ মতভেদ:
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াকে উপেক্ষা করে বলেন, এই সমালোচনার কারণে তারা তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে না। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ একে বিপর্যয় ডেকে আনা সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন এবং সেনাবাহিনীর পরামর্শ উপেক্ষার অভিযোগ তোলেন।
মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া:
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজা দখলের এই পরিকল্পনা ‘ভয়ঙ্কর ও জঘন্য’। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এর ফলে গাজায় আরও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে।