ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনে অংশ নেয়া ইমন পুলিশ হত্যা মামলায় কারাগারে

নিজস্ব সংবাদ :

ছবি সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সন্তানের জেলে যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা জাহানারা বেগম। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রামের একুশ বছরের যুবক ইমাম হোসেন ইমন জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের হুমকিও দমাতে পারেনি তাকে। কিন্তু সেই ইমনকেই এবার আন্দোলনের সময় এক কনস্টেবল হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।


ইমনের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আন্দোলন করছে, নতুন বাংলাদেশ গড়ছে। এখন তারা আমার ছেলেকে নিয়ে অন্ধকারে রাখছে।’


গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার ইমনসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শুক্রবার আদালতে তোলার পর নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা রুমির কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। তবে ইমনকে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

প্রতিবেশীরা জানায়, তারা খুঁজতে খুঁজতে সোনাইমুড়ি থানায় গেছেন। কিন্তু এক এসআইকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি ইমন নামে কাউকে এ থানায় আনা হয়নি বলে জানান। পরে কোণার দিকে একটা রুমের সামনে গিয়ে কৌশলে ইমনের ছোট ভাই জাকিরের নাম ধরে ডাক দিলে, ইমন ভেতর থেকে সাড়া দেয়। ইমন স্বজনদের জানায়, তাকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি জোর করে কয়েকটি কল রেকর্ড করে মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রশাসন যদি এমন করে ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়, তাহলে যৌক্তিক দাবি আদায়ে আর কেউ মাঠে নামবে না।

ইমনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তারা আবারও রাজপথে নেমেছেন ইমনের মুক্তির দাবিতে।

ছাত্ররা জানায়, ইমন তাদের সঙ্গে এ আন্দোলন করেছে কিন্তু হত্যার মতো কাজের সঙ্গে সে যুক্ত ছিল না। আর আন্দোলন করা যদি অপরাধ হয়, তাহলে ইমন একা তো আন্দোলন করেনি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। সবাই কি তবে অপরাধী!

এদিকে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেয়াদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া ও গ্রেফতার করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে কাজ করেছেন, ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘঠিত ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। এছাড়া তাদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করতেও নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইমনের ঘটনায় নোয়াখালী পুলিশ সুপারের অফিস থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:১৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
৩ বার পড়া হয়েছে

আন্দোলনে অংশ নেয়া ইমন পুলিশ হত্যা মামলায় কারাগারে

আপডেট সময় ১০:১৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সন্তানের জেলে যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা জাহানারা বেগম। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রামের একুশ বছরের যুবক ইমাম হোসেন ইমন জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের হুমকিও দমাতে পারেনি তাকে। কিন্তু সেই ইমনকেই এবার আন্দোলনের সময় এক কনস্টেবল হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।


ইমনের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আন্দোলন করছে, নতুন বাংলাদেশ গড়ছে। এখন তারা আমার ছেলেকে নিয়ে অন্ধকারে রাখছে।’


গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার ইমনসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শুক্রবার আদালতে তোলার পর নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা রুমির কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। তবে ইমনকে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

প্রতিবেশীরা জানায়, তারা খুঁজতে খুঁজতে সোনাইমুড়ি থানায় গেছেন। কিন্তু এক এসআইকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি ইমন নামে কাউকে এ থানায় আনা হয়নি বলে জানান। পরে কোণার দিকে একটা রুমের সামনে গিয়ে কৌশলে ইমনের ছোট ভাই জাকিরের নাম ধরে ডাক দিলে, ইমন ভেতর থেকে সাড়া দেয়। ইমন স্বজনদের জানায়, তাকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি জোর করে কয়েকটি কল রেকর্ড করে মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রশাসন যদি এমন করে ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়, তাহলে যৌক্তিক দাবি আদায়ে আর কেউ মাঠে নামবে না।

ইমনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তারা আবারও রাজপথে নেমেছেন ইমনের মুক্তির দাবিতে।

ছাত্ররা জানায়, ইমন তাদের সঙ্গে এ আন্দোলন করেছে কিন্তু হত্যার মতো কাজের সঙ্গে সে যুক্ত ছিল না। আর আন্দোলন করা যদি অপরাধ হয়, তাহলে ইমন একা তো আন্দোলন করেনি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। সবাই কি তবে অপরাধী!

এদিকে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেয়াদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া ও গ্রেফতার করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে কাজ করেছেন, ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘঠিত ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। এছাড়া তাদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করতেও নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইমনের ঘটনায় নোয়াখালী পুলিশ সুপারের অফিস থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।