ব্রেকিং নিউজ :
সাইফের ওপর হামলার ঘটনায় যেসব প্রশ্ন রহস্যের জন্ম দিচ্ছে
সাইফের ওপর হামলার ঘটনায় যেসব প্রশ্ন রহস্যের জন্ম দিচ্ছে।
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান নিজ বাড়িতে ছয়বার ছুরিকাঘাতের শিকার হওয়ার পর থেকেই ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম রহস্য দানা বাঁধছে। বেশ কয়েকটি জোরালো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যার উত্তর এখনো মেলেনি।
সাইফ আলীর ঘটনাটি নিয়ে যে ধরনের বর্ণনা সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেতা ও সমালোচক কামাল আর খান। সোমবার (২০ জানুয়ারি) কামাল তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। প্রায় ১৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ, সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর, খান পরিবারের পরিচারিকা ও সাইফের স্ত্রী কারিনা কাপুরের বক্তব্য শোনার পর বেশকিছু বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কামাল। যা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সাইফের ঘটনায় কামাল যেসব সন্দেহজনক বিষয়ের কথা বলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-
- পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী মাস পাঁচেক আগে মুম্বাই এসেছিলো। কিন্তু যদি ৫ মাস আগেই মুম্বাই আসেন হামলাকারী তবে সস্তায় থাকা যায় এমন কোনো এলাকায় না থেকে কেন বান্দ্রার মতো ব্যয়বহুল এলাকার আশেপাশে তিনি বসবাস করতে শুরু করলেন? নিরাপত্তায় ঘেরা একটি বিলাসবহুল বাড়িতে তিনি কীভাবে ঢুকলেন?
- সাইফ আলীর বিলাসবহুল ওই বিল্ডিংয়ে কোথায় সিঁড়ি, কোথায় লিফট, ফ্ল্যাটের ভেতরে কোথায় কোন রুমে খান পরিবারের সদস্যরা থাকেন, তা হামলাকারী কীভাবে জানলেন?
- কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরও নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ হামলাকারী কীভাবে ফাঁকি দিলো। অথবা ওই বাড়িতে একজন ডাকপিয়নেরও ঢোকার সুযোগ নেই?
- নেটদুনিয়ায় ওই বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুজেট ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অজ্ঞাত ওই হামলাকারীকে দেখা যাচ্ছে। অথচ সে প্রবেশের সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটকাননি। কিন্তু কেন?
- সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারী কাপড়ে মুখ ঢেকে খালি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে সাইফ আলীর ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। কিন্তু ঘটনার পর যখন তিনি বের হন তখন তার পায়ে জুতা ছিল। এক ব্যক্তিতে ৬ বার ছুরিকাঘাত করার পর বের হওয়ার সময় একজন ব্যক্তি পায়ে জুতা পরা সুযোগ পেলেন কীভাবে?
- বলা হচ্ছে, ছয়বার পিঠ ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাতের পর সাইফ রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে যান। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারী যখন সিঁড়ি দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন তার হাত, শরীর কিংবা পোশাকের কোথাও কোনো রক্তের দাগ। এটা কীভাবে সম্ভব?
- খান পরিবারের পরিচারিকা মুম্বাই পুলিশের কাছে তদন্তের বয়ানে বলেন, তিনি হামলাকারীকে প্রথমে বাথরুমে দেখেন। বিলাসবহুল বাড়ির পেছনের পাইপ বেয়ে তিনি উঠেছেন। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সিঁড়ি দিয়েই হামলাকারী ঢুকেঁছেন। এমনটা কেন বলা হচ্ছে?
- যদি পরিচারিকার কথা সত্য হয় অর্থাৎ হামলাকারী বাথরুমে ছিলেন। তার মানে ফ্ল্যাটের মূল দরজা (নিরাপত্তা জোরদার করতে ডাবল দরজা ছিল মূল প্রবেশ পথে) দিয়েই তিনি ঢুকেছিলেন। হতে পারে বাড়ির কোনো সদস্যই সে দরজা খুলে দিয়েছিলেন। হামলাকারী পূর্ব পরিচিত অথবা পরিচারিকাদের কাউকে অর্থলোভ দেখিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করেন, এমন কিছু তদন্তে লুকানো হচ্ছে না তো?
- পুলিশী তদন্তে কারিনা যে বয়ান দেন তাতে তিনি বলেন, ওই হামলার সময় ঘরে ছেলে, মেয়েসহ পাঁচ পরিচারিকা ছিলেন। প্রশ্ন হলো, সাইফের মতো সাহসী ও সুঠাম দেহের অধিকারী ও ঘরের পাঁচ কর্মচারী মিলে কেন পাতলা শরীরের একজন হামলাকারীকে ধরতে পারলেন না? হামলাকারীকে ইচ্ছাকৃত পালিয়ে যেতে দেয়া হয়নি তো?
- কারিনা তার বয়ানে বলেছেন, হামলাকারীর কাছে কিছু সময় চেয়ে বাড়ির শিশু ও মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে দেন সাইফ। তারপর ওই হামলাকারীর সঙ্গে সাইফের আলাপ হয়। এক সময় তর্কাতর্কি শুরু হয়। যার রেশে হামলাকারী সাইফকে ছয়বার ছুরি দিয়ে কোপায়। এতে সহজেই স্পষ্ট হয় যে, হামলাকারী পূর্ব পরিচিত।
- হামলার পর রক্তাক্ত সাইফ কাউকে কিছুই জানাননি। বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী, প্রতিবেশী কাউকে কিছু না জানালেন না কেন?
- ব্যক্তিগত একাধিক গাড়ি, দুজন ড্রাইভার থাকার পরও আট বছরের শিশু ছেলে তৈমুরকে নিয়ে অটোরিকশায় করে হাসপাতালে যান সাইফ। কিন্তু কেন?
- কামাল বলছেন, হামলার শিকার সাইফ প্রথমে পুলিশের কাছে বিষয়টি জানাতে চাননি। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা ছুরিকাঘাতের রোগী দেখে পুলিশে ইনফর্ম করেন। তারপর পুলিশ জানতে পারেন সাইফ নিজ বাড়িতে হামলার শিকার। সাইফ কেন পুলিশকে জানাননি?
কামল আর খানের ভাষায়, ‘ডালমে কুচ কালা হ্যায়!’। তিনি বলেন, সাইফের ফ্ল্যাটে সেদিন কেন ওই ছেলে এসেছিলেন তা প্রকৃত হামলাকারীকে পেলেই জানা যাবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যাকে ধরা হয়েছে আমার কাছে মনে হচ্ছে তিনি হামলাকারী নন। কেননা, হামলার একদিন পরই তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গজানো অসম্ভব। হামলাকারী হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার গালে কম করে হলেও ১০, ১৫ দিনের বড় হওয়া মোচ ও দাঁড়ি ছিল। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারী ক্লিন শেভড দেখা গেছে।
কামালের মতে, হতে পারে হামলাকারী সাইফের পরিচিত। কিংবা আগে সাইফের বাড়িতে কাজ করতো। যে কারণে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দিয়েছেন অনায়াসেই। সাইফের ওপর হামলার ঘটনাটি মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে কোনো নেতা বা অভিনেতার সাজানো কি না এমন সন্দেহও প্রকাশ করেন কামাল আর খান।